প্রাসিয়ার রাজা প্রসিদ্ধ রাসায়নিক পটকে উহার তথ্য নির্ণয় করিবার জন্য আদেশ দেন। কিন্তু পট বহু চেষ্টা করিয়াও কিছুই জানিতে পারেন নাই। তখন তিনি নিজেই এ সম্বন্ধে নানা পরীক্ষা করিতে থাকেন। কথিত আছে যে এজন্য পট প্রায় ত্রিশ হাজার বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন খনিজ পদার্থে তাপ দিলে কিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, এই সমস্ত এবং মৃৎশিল্প সম্পর্কে আরও অনেক মূল্যবান তথ্য মিসেনের পরীক্ষা হইতে আমরা জানিতে পারিয়াছি। এই সময়ে রোমারও মৃৎশিল্প নির্মাণ রহস্য আবিষ্কার করিতে চেষ্টা করেন। তিনি দেখিতে পান দুই বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকার সংযোগে উহা তৈরী হয়।
“রোমারের পরে ১৭৫৮ সালে লোরাগোয়ে, ডা’রসেট এবং লিগেসী ফ্রান্সে এই বিষয়ে পরীক্ষা আরম্ভ করেন, এবং তাঁহারা ম্যাকারের সহযোগে মৃৎশিল্প নির্মাণ প্রণালী পুনরাবিষ্কারে সক্ষম হন। ১৭৬৯ খৃষ্টাব্দে সেভার্সের বিখ্যাত মৃৎশিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
“ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত আসল মৃৎশিল্প দুর্ল্লভ ছিল। বর্তমানে ইহা সুলভ হইয়াছে, এবং সাধারণ দৈনন্দিন কাজেও এই সব পাত্র ব্যবহৃত হয়।” রস্কো এবং শোলের্মার ২য় খণ্ড, ১৯২৩।
উদ্ধৃত বিবরণ হইতে বুঝা যাইবে, এদেশে কোন শিল্প প্রবর্তকের পথ কিরূপ বাধাবিঘ্ন সঙ্কুল। জাপান ও ইয়োরোপের পশ্চাতে বহু বৎসরের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে। সুতরাং তাহারা ঐ সমস্ত সুবিধার বলে অতি সুলভে পণ্য আমদানী করিয়া আমাদের বাজার দখল করিতে পারে।[১] কলিকাতা পটারী ওয়ার্কস এবং অন্যান্য কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে এবং সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা হইতে আমি বুঝিতে পারিয়াছি, কোন শিল্প ব্যবসায়ে সাফল্য লাভ করিতে হইলে, কত অর্থ, সময় ও শক্তি ব্যয়ের প্রয়োজন।
কোন কোন মেধাবী ছাত্রকে বিদেশে শিল্প শিক্ষার্থ প্রেরণ করা হইত; তাহারা দেশে ফিরিয়া আসিয়া কোন নূতন শিল্প প্রবর্তন করিতে পারিবে, এইরূপ আশা আমরা মনে মনে পোষণ করিতাম। কিন্তু এইরূপ সোজা বাঁধা রাস্তায় কোন কাজ হইতে পারে না; এ দেশেও বহু শিল্প প্রবর্তনের চেষ্টা এই ভাবে ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে।
বিদেশ হইতে কোন শিল্পে বিশেষজ্ঞ হইয়া যখন কোন যুবক ফিরিয়া আসে, তখন সে যেন অগাধ জলে পড়িয়া যায়। তাহাকে মূলধন সংগ্রহ করিতে হইলে, কোম্পানী গঠন করিতে হইবে। ব্যবসায় গড়িয়া তুলিতে হইলে, কাঁচা মাল সংগ্রহ এবং বাজারে তৈরী শিল্পজাত বিক্রয় করা, সবই তাহাকে করিতে হইবে। এক কথায়, তাহার মধ্যে বিবিধ বিরোধী গুণের সমাবেশ থাকা চাই। যদিও সৌভাগ্যক্রমে সে মুলধনী সংগ্রহ করিতে পারে, তাহা হইলেও যখন কাজ আরম্ভ হয়, তখনই সত্যকার বাধাবিঘ্ন, অসুবিধা প্রভৃতি দেখা দেয়। যুবকটি যে দেশে শিক্ষা লাভ করিয়া আসিয়াছে, সেখানকার জলবায়ু, কাঁচামাল এবং অন্যান্য অবস্থা, ভারতবর্ষ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। নিজের দেশের স্থানীয় অবস্থা সম্বন্ধে তাহার হয় ত কোন জ্ঞান নাই। ইয়োরোপে সে বহু টাকা মূলধনে বিরাট আকারে পরিচালিত ব্যবসা দেখিয়া আসিয়াছে। ঐ দেশে শিক্ষিত দক্ষ কারিগরও সর্বদা পাওয়া যায়। মৃৎশিল্পের কথাই ধরা যাক। ইউরোপে বালি, মাটী প্রভৃতি উপকরণ ভারতের তুলনায় সম্পূর্ণ বিভিন্ন।
- ↑ বর্তমানে জাপান ও জেকোশ্লোভাকিয়া কলিকাতার বাজারে দেশীয় শিল্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দী।