বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিংশ পরিচ্ছেদ
২২৩

শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন। রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিংএর সংস্পর্শে থাকার দরুণ, আমাদের ব্যবসায়ের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাও বৃদ্ধি পাইয়াছিল। তাঁহার নিজের বিভাগে তিনি বিশেষরূপে দক্ষতা লাভ করেন। আমরা বিনা দ্বিধায় তাঁহার হস্তে নূতন অ্যাসিড প্ল্যাণ্ট তৈরীর ভার ন্যস্ত করিলাম। যন্ত্রনির্মাতা যে প্ল্যান ও বিস্তৃত বিবরণ দিয়াছিলেন, তিনি বিশেষ যত্ন সহকারে তাহার তাৎপর্য বুঝিয়া লইয়াছিলেন। এই কার্যে কৌশল ও দক্ষতা প্রদর্শন করিয়া তিনি আমাদের সকলেরই প্রশংসা অর্জন করেন। যন্ত্রনির্মাতা যে প্ল্যান দাখিল করেন, তাহার মধ্যে কয়েকটি ত্রুটিও তিনি প্রদর্শন করেন এবং সেগুলি যন্ত্রনির্মাতা নিজেও মানিয়া লন। ভারতবর্ষে বোধহয় ইহাই অন্যতম বড় অ্যাসিড তৈরীর কল। টেকনোলজিক্যাল ইনষ্টিটিউটে, ছাত্রদের সালফিউরিক অ্যাসিড প্রস্তুত প্রণালী শিক্ষা দিবার জন্য কলের একটি ক্ষুদ্র নমুনা দেখান হয়। এইভাবে প্রদর্শনীতে তাজমহলের নমুনাও দেখান হয়। সেই তাজমহলের নমুনা দেখিয়া যেমন কেহ তাজমহল তৈরী করিতে পারে না, তেমনি ক্ষুদ্র একটি নমুনা দেখিয়া অ্যাসিড তৈরীর কলও কেহ বসাইতে পারে না।

(৫) ব্যবসায়ে কলেজের গ্রাজুয়েট

 তবে কি শিল্প ব্যবসায়ে কলেজে শিক্ষিত যুবকের স্থান নাই? স্থান নিশ্চয়ই আছে, তবে তাহা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। তজ্জন্য তাহাকে ছাত্রজীবনের অদ্ভুত ধারণাসমূহ ত্যাগ করিতে হইবে এবং নূতন করিয়া শিক্ষানবীশ হইয়া গোড়া হইতে কাজ আরম্ভ করিতে হইবে। এইরূপ অবস্থায় সে তাহার যোগ্যতা সপ্রমাণ করিতে পারে। কার্নেগী বলেন,—

 “পূর্বে আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবকেরা অল্ই বয়সেই গ্রাজুয়েট হইত। আমরা এই নিয়মের পরিবর্তন করিয়াছি। এখন যুবকেরা বেশী বয়সে গ্রাজুয়েট হইয়া জীবন সংগ্রামে প্রবেশ করে—অবশ্য তাহারা পূর্বেকার গ্রাজুয়েটদের চেয়ে অনেক বেশী বিষয় শিখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত যুবকেরা যদি তাহাদের মুখ্য কর্মক্ষেত্রে সমস্ত শক্তি ও সময় দিয়া জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করিতে চেষ্টা না করে, তবে তাহারা যে সব যুবক, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করে নাই, অথচ অল্পবয়সে ব্যবসায়ে প্রবেশ করিয়াছে, তাহাদের অপেক্ষা বেশী অসুবিধা ভোগ করিবে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

 “অধিক বয়স্ক গ্রাজুয়েটরা উন্নতিশীল ব্যবসায়ে আর এক প্রকারের অসুবিধায় পতিত হয়। ঐ ব্যবসায়ে চাকরীর ব্যবস্থা সুশৃঙ্খলিত, যোগ্যতা অনুসারে ‘প্রোমোশান’ দেওয়া হয়। সুতরাং সেখানে কাজ নিতে হইলে, সর্বনিম্ন স্তরে প্রবেশ করিতে হয়। তাহাকে গোড়া হইতেই কাজ আরম্ভ করিতে হয় এবং এই নিয়ম তাহার নিজের পক্ষে ও অন্য সকলের পক্ষেই ভাল।—The Empire of Business, pp. 206-8.

 “মেধাবী গ্রাজুয়েট মেধাবী অ-গ্রাজুয়েটের চেয়ে নিশ্চয়ই যোগ্যতায় শ্রেষ্ঠ। সে বেশী শিক্ষা পাইয়াছে এবং অন্য সমস্ত গুণ সমান হইলে, শিক্ষা দ্বারা নিশ্চয়ই যোগ্যতা বৃদ্ধি হইবে; দুইজন লোকের সাধারণ যোগ্যতা, কর্মশক্তি, আশা-আকাঙ্ক্ষা যদি একই প্রকারের হয়, তবে তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিকতর উদার ও উচ্চাঙ্গের শিক্ষা লাভ করিয়াছে, সে নিশ্চয়ই কর্মক্ষেত্রে বেশী সুবিধার অধিকারী হইবে।” (The Empire of Business).

 পরলোকগত লর্ড মেলচেটের (আলফ্রেড মণ্ড) জীবনে ইহার সুন্দর দৃষ্টান্ত দেখা গিয়াছে। লর্ড মেলচেট একজন কৃতী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি দুইটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন, ব্যারিষ্টারও হইয়াছিলেন। তাঁহার পিতা লাডুইগ মণ্ড একটি সুবৃহৎ অ্যালকালি কারখানার মালিক ছিলেন। লাডুইগ মণ্ডও জার্মানীর হিডেলবার্গ বিশ্ব-