বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ

বাংলা ভারতের কামধেনু (পূর্বাণুবৃত্তি)

বাঙালীদের অক্ষমতা এবং অবাঙালী কর্তৃক বাংলার আর্থিক বিজয়

(১) ব্যর্থতার কারণ— অক্ষমতা

 ব্যবসা বাণিজ্যে সাফল্য লাভ করিতে হইলে, যে দুইটি প্রধান গুণের প্রয়োজন, তাহা বাঙালীর চরিত্রে নাই; সে দুইটি গুণ ব্যবসায়বুদ্ধি এবং নূতন কর্ম প্রচেষ্টায় অনুরাগ। বাঙালী ভাবুক ও আদর্শবাদী, সেই তুলনায় বাস্তববাদী নয়,—এই কারণে ব্যবসায় ক্ষেত্রে সে পশ্চাৎপদ। ১৭৫৩ সালে ঢাকার বস্ত্রব্যবসায়ের অবস্থা সম্বন্ধে টেলর যে বিবরণ দিয়াছেন, তাহা হইতে এ সম্বন্ধে অনেক রহস্য জানিতে পারা যায়। আলিবর্দীর শাসনকালে বাঙালী ছাড়া আর যে সব জাতির লোক বাংলাদেশে বাণিজ্য করিত, এই বিবরণ হইতে তাহাদের সম্বন্ধে অনেক তথ্য সংগৃহীত হইতে পারে। যথা- (১) তুরাণীগণ (অক্‌সাস্ নদীর পরপারে তুরাণ দেশ হইতে আগত বণিকগণ); (২) পাঠানগণ—ইহারা প্রধানতঃ উত্তর ভারতে বাণিজ্য করিত; (৩) আর্মাণীগণ—ইহারা বসোরা, মোচা এবং জেড্ডায় বাণিজ্য করিত; (৪) মোগলগণ—ইহারা অংশতঃ ভারতে এবং অংশতঃ বসোরা, মোচা ও জেড্ডায় বাণিজ্য করিত; (৫) হিন্দুগণ—ভারতে বাণিজ্য করিত; (৬) ইংরাজ কোম্পানী; (৭) ফরাসী কোম্পানী; (৮) ওলন্দাজ কোম্পানী।[]বলা বাহুল্য, ইয়োরোপীয় কোম্পানী গুলি ইয়োরোপে এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে পণ্য রপ্তানী করিত। আর্মাণীগণ সমুদ্র বাণিজ্যে প্রধান অংশ গ্রহণ করিত। সিরাজদ্দৌলার পতনের পর মীর জাফরের সঙ্গে ইংরাজদের যে সন্ধি হয়, তাহাতে একটা সর্ত ছিল ‘কলিকাতার অনিষ্ট হওয়াতে যাহাদের ক্ষতি হইয়াছে’ তাহাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। এই সর্তে ক্ষতিগ্রস্ত ইংরাজদের ৫০ লক্ষ টাকা এবং আর্মাণীদের জন্য ৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হইয়াছিল।[]১৬শ শতাব্দীতে সমুদ্র বাণিজ্যের পরিমাণ সামান্য ছিল না। কেননা তৎসাময়িক বৃত্তান্তে লিখিত আছে যে, ১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে মালদহের সেখ ভিক তিন হাজার মালদহী কাপড় পারস্য উপসাগর দিয়া রাশিয়াতে পাঠাইয়াছিলেন। হেষ্টিংসের সময়ে বাংলার বহির্বাণিজ্য প্রায় সমস্ত ইয়োরোপীয়দের হাতে ছিল।[]


  1. J. C. Sinha-Economic Annals.
  2. Stewart’s History of Bengal, (১৮১৩)—পরিশিষ্ট।
     “আর্মাণীরা অতি প্রাচীন কাল হইতেই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করিত। তাহারা তাহাদের দূরবর্তী তুষারাচ্ছন্ন পার্বত্য দেশ হইতে বাণিজ্যের লোভেই ভারতে আসিয়াছিল। ভারত হইতে তাহারা মসলা, মসলিন এবং মূল্যবান রত্নাদি লইয়া ইয়োরোপে বাণিজ্য করিত। ইয়োরোপীয় বণিক, ভ্রমণকারী এবং ভাগ্যান্বেষীদের আগমনের পূর্ব হইতেই আর্মাণীরা ভারতের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন করিয়াছিল।”—
    Indian Historical Records Commission, Vol. iii, p. 198.
  3. “সমুদ্র বাণিজ্যের দুইটি বিভাগ ব্যতীত অন্য সমস্ত বিভাগে ইয়োরোপীয়েরা বাঙালীদিগকে স্থানচ্যুত করিয়াছিল। এই দুইটি বিভাগ মালদ্বীপ ও আসাম। ইহার কারণ, মালদ্বীপের