পাতা:আত্মচরিত (২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Stor শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত ' ৫ম পরিঃ লইয়া যখন সভামধ্যে চেয়ারে বসাইয়া দিল, তখন কি হইল, তাহা সকলেই অনুভব করিতে পারেন। প্রথমেই গিয়া শুনিলাম, গান হইতেছে, “মনে কর শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর ; অন্যে বাক্য কবে, কিন্তু তুমি রবে নিরুত্তর।!” যেমন উপাসনার আয়োজন, তেমনি গান ! পরে শুনিলাম, যাহাকে গান করিবার জন্য ধরিয়া আনিয়াছিল, সে ব্যক্তি ব্রহ্মসংগীতের মধ্যে রামমোহন রায়ের গানই জানিত, তাই গাইতেছিল। গান শেষ হইলে আমি প্রার্থনা করিতে প্রবৃত্ত হইলাম। আমার প্রার্থনার মধ্যে সভাস্থল হইতে করতালির চটপটা ধ্বনি উঠিতে লাগিল। এই জন্য এ বিবাহ-অনুষ্ঠানকে খিচুড়ীবিবাহ বলিয়াছি। উপাসনার পর এক কাগজে বীরকন্যা স্বাক্ষর করিলেন। আমার যতদূর স্মরণ হয়, সাক্ষীদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় বন্ধু আনন্দমোহন বসু একজন ছিলেন। তখন কিন্তু তঁাহার সহিত আমার আলাপ পরিচয় হয় নাই। বিধবাবিবাহের পর উপেন্দ্রনাথ দাসের সহিত সম্বন্ধ ।-বিবাহের পর উপেনের সহিত ও তাহার নবপরিণীত স্ত্রীর সহিত আমার সম্বন্ধ আরও গাঢ় হইল। আমি সর্ব্বদাই তাহাদিগের সংবাদ লইতাম, এবং কিছু কাজ পড়িলে করিয়া দিতাম। এই সময় হইতে উপেনকে নুনাপ্রকার প্রবঞ্চনাদোষে লিপ্ত দেখিতে লাগিলাম। ঋণশোধের প্রতি দৃষ্টি ক{ রাখিয়া ধার করা, বাড়ীভাড়া করিয়া ভাড়া না দিয়া রাতারাতি পলাইলা অন্য বাড়ীতে যাওয়া, ইত্যাদি। দুই একবার নিজে কার্জ করিয়া টাকা দিয়া এরূপ অবস্থা হইতে তাহাকে সপরিবারে উদ্ধার করিতে হইল। তথাপি তাহার প্রতি বিশ্বাস ভাঙ্গিতে অনেক দিন গিয়াছিল। একবার রাত্রি দুইটার সময় উপেন সপরিবারে পলাইয়া কলিকাতা হইতে অমৃতবাজারের শিশিরকুমার ঘোষের বাড়ীতে যান। তখন শিশিরবাবুর অগ্রসর সংস্কারক ও ব্রাহ্ম ছিলেন। সেই রাত্রে আমি যোগেন ও উমেশ মুখুয্যে সশস্ত্র হইয়া তাদের স্ত্রীপুরুষকে আণ্ডলিয়া নারিকেলডাঙ্গার খালে নৌকায় তুলিয়া দিয়া আসিয়াছিলাম। এখন মনে হইলে হাসি পায় ।