পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিষ্ট ] , পিতার সহৃদয়তা 8ዓዓ. আসিব । তিনি বলিলেন, “না, আমি সেই তিনটার গাড়িতেই যাব।” এই বলিয়া শয়ন করিয়া অকাতরে নিদ্রা গেলেন। কুসুম ও আমি কত যে হাসিলাম, তা আর কি বলিব। এক বার মুখ দিয়া বলিয়াছেন, “তিনটার গাড়িতে” ; সেটা ছেলে মেয়েদের কথাতে লজঘন হইবে, তাহ সহ্য হইল না ! এই স্থানে ইহাও উল্লেখযোগ্য যে, এই একগুয়ে মানুষকে লইয়া ঘরকন্না করিতে আমার মাকে যে কি কষ্ট পাইতে হইয়াছিল, তাহার বর্ণনা হয় না। বাবা কথা না শুনিলে মা যখন ঝগড়া করিতেন, তখন বাবা বলিতেন, “আমি ত আর ‘ঘণ্টার গরুড়”* নাই যে, “যে-আজ্ঞে’ ব’লে হাত যোড় ক’রে থাকৃব !” বাস্তবিক, পাছে কেহ র্তাহাকে ‘ঘণ্টার গরুড় মনে করে, এই ভয়ে তিনি চিরদিন দৃঢ়রপে স্বমতপ্রিয়তা অবলম্বন করিয়া থাকিয়াছেন । তৎপরে পিতৃদেবের আর একটি উল্লেখযোগ্য গুণ সহৃদয়ত। এরূপ দয়ালু মানুষ কম দেখা যায়। অগ্রেই তঁাঙ্গার দয়ার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করিয়াছি। আরও কয়েকটি উল্লেখ করিতেছি। এক বার আমার জননী এক জন গ্রাম-পাশ্ববর্ত্তী চাষ লোককে ষোলটি টাকা এই বলিয়া কার্জ দিয়াছিলেন যে, সে সুদের পরিবর্তে প্রতি হাটবারে কিছু কিছু তরকারি দিয়া যাইবে, তার পর হাতে টাকা হইলে টাকা শোধ করিবে। দুই বৎসর যায়, চারি বৎসর যায়, সে হাটবারে হাটবারে তরকারি দিয়া যাইতেছে ; ইতিমধ্যে মার টাকার বড় প্রয়োজন লইল । তিনি ঐ ব্যক্তিকে টাকা শোধ করিবার জন্য ধরিলেন। তখন তাহার হাতে টাকা নাই ; সে মাকে বিলম্ব করিতে কহিল। মা বিলম্ব করিয়া রহিলেন। কিন্তু শেষে সে হাটবারে আর সে পথ দিয়া আসে না ; মা তাকে আর দেখিতে পান না। এ দিকে দুর্বৎসর উপস্থিত হইয়া

  • ঘণ্টার উৰ্দ্ধ ভাগে (হাতলে ) প্রায়ই একটি যোড় হস্ত মনুষ্য মূর্ত্তি থাকে । সেটি গরুড়ের মূর্ত্তি বলিয়া প্রসিদ্ধ। -(সম্পাদক)।