পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
আত্মশক্তি।

না। আত্মসম্মান ব্যতীত কোন জাত কোনো সফলতা লাভ করিতে পারে না—পরের ঘরে জল-তোলা এবং কাঠ-কাটার কাজে লাগিতে পারে, কিন্তু দ্বিজধর্ম্ম অর্থাৎ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যের বৃত্তিরক্ষা করিতে পারে না।

 একটা কথা আমাদিগকে সর্ব্বদাই মনে রাখিতে হইবে যে, আমাদিগকে যে খোঁটা দেওয়া হইয়া থাকে, তাহা সম্পূর্ণ অমুলক। এবং যাঁহারা খোঁটা দেন, তাঁহারাও যে মনে মনে তাহা জানেন না, তাহাও আমরা স্বীকার করিব না। কারণ, আমরা দেখিয়াছি, পাছে তাঁহাদের কথা অপ্রমাণ হইয়া যায়, এজন্য তাঁহারা ত্রস্ত আছেন।

 এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে, বিলাতী সভ্যতা বস্তুত দুরূহ ও দুর্লভ নয়। স্বাধীন জাপান আজ পঞ্চাশবৎসরে এই সভ্যতা আদায় করিয়া লইয়া গুরুমারা বিদ্যায় প্রবৃত্ত হইয়াছে। এ সভ্যতা অনেকটা ইস্কুলের জিনিষ, পরীক্ষা করা, মুখস্থ করা, চর্চ্চা করার উপরেই ইহার নির্ভর। জাপানের মত সম্পূর্ণ সুযোগ ও আনুকুল্য পাইলে এই ইস্কুলপাঠ আমরা পেড্‌লার-সম্প্রদায় আসিবার বহুকাল পূর্ব্বেই শেষ করিতে পারিতাম। প্রাচ্য সভ্যতা ধর্ম্মগত— তাহার পথ নিশিত ক্ষুরধারের ন্যায় দুর্গম— তাহা ইস্কুলের পড়া নহে, তাহা জীবনের সাধনা।

 এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে, এতকাল অনেক বিদেশী অধ্যাপক আমাদের কালেজের পরীক্ষাশালার যন্ত্রতন্ত্র লইয়া অনেক নাড়াচাড়া করিয়াছেন, তাঁহারা কেহই স্বাধীনবুদ্ধি দেখাইয়া, যশস্বী হইতে পারেন নাই। বাঙালীর মধ্যেই জগদীশ ও প্রফুল্লচন্দ্র সুযোগলাভ করিয়া সেই সুযোগের ফল দেখাইয়াছেন। পরের সহিত তর্কের জন্যই এগুলি স্মরণীয়, তাহা নহে, নিজেদের উৎসাহ ও আত্মসম্ভ্রমের জন্য। পরের কথায় নিজেদের প্রতি যেন অবিশ্বাস না জন্মে!