পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবস্থা ও ব্যবস্থা।
১৩৩

সম্পন্ন হইবার এবং উৎসাহ স্থায়িভাবে রক্ষিত হইবার সম্ভাবনা থাকে।

 তবে কিনা, যেমন ঘড়ির কল কোনো একটা আকস্মিক বাধায় বদ্ধ হইয়া থাকিলে তাহাকে প্রথমে একটা নাড়া দেওয়া যায়, তাহার পরেই সে আর দ্বিতীয় ঝাঁকানির অপেক্ষা না করিয়া নিজের দমেই নিজে চলিতে থাকে—তেম্‌নি স্বদেশের প্রতি কর্ত্তব্যপরতাও হয় ত আমাদের সমাজে একটা বড়রকমের ঝাঁকানির অপেক্ষায় ছিল— হয়ত স্বদেশের প্রতি স্বভাবসিদ্ধ প্রীতি এই ঝাঁকানির পর হইতে নিজের আভ্যন্তরিক শক্তিতেই আবার কিছুকাল সহজে চলিতে থাকিবে। অতএব এই ঝাঁকানিটা যাহাতে আমাদের মনের উপরে বেশ রীতিমত লাগে, সে পক্ষেও আমাদিগকে সচেষ্ট হইতে হইবে। যদি সাময়িক আন্দোলনের সাহায্যে আমাদের নিত্য জীবনী ক্রিয়া সজাগ হইয়া উঠে, তবে এই সুযোগটা ছাড়িয়া দেওয়া কিছু নয়।

 এখন তবে কথা এই যে, আমাদের দেশে বঙ্গব্যবচ্ছেদের আক্ষেপে আমরা সথাসম্ভব বিলাতী জিনিষ-কেনা বন্ধ করিয়া দেশী জিনিষ কিনিবার জন্য যে সঙ্কল্প করিয়াছি, সেই সঙ্কল্পটিকে স্তব্ধভাবে, গভীরভাবে স্থায়ী মঙ্গলের উপরে স্থাপিত করিতে হইবে। আমি আমাদের এই বর্ত্তমান উদ্যোগটির সম্বদ্ধে যদি আনন্দ অনুভব করি, তবে তাহার কারণ এ নয় যে, তাহাতে ইংরেজের ক্ষতি হইবে, তাহার কারণ সম্পূর্ণভাবে এও নহে যে, তাহাতে আমাদের দেশী ব্যবসায়ীদের লাভ হইবে— এ সমস্ত লাভক্ষতি নানা বাহিরের অবস্থার উপরে নির্ভর করে সে সমস্ত সূক্ষ্মভাবে বিচার করিয়া দেখা আমার ক্ষমতায় নাই। আমি আমাদের অন্তরের লাভের দিক্‌টা দেখিতেছি। আমি দেখিতেছি, আমরা যদি সর্ব্বদা সচেষ্ট হইয়া দেশীজিনিয ব্যবহার করিতে প্রবৃত্ত হই, যে জিনিষটা দেশী নহে, তাহার ব্যবহারে বাধ্য হইতে হইলে যদি কষ্ট অনুভব করিতে থাকি, দেশী-