পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবস্থা ও ব্যবস্থা।
১৪৫

দেশের চাষীদিগকে নিঃশেষে পরের হাতে বিকাইয়া দেওয়া হয় না? যাহারা যথার্থই দেশের বল, দেশের সম্পদ্, তাহাদের প্রত্যেকটিকে কি পরের হাতে এম্‌নি করিয়া বাঁধা রাখিতে হইবে? আমরা যে পরিমাণেই দেশের কাজ পরকে দিয়া করাইব, সেই পরিমাণেই আমরা নিজের শক্তিকেই বিকাইতে থাকিব, দেশকে স্বেচ্ছাকৃত অধীনতাপাশে উত্তরোত্তর অধিকতর বাঁধিতে থাকিব, এ কথা কি বুঝাই এতই কঠিন? পরের প্রদত্ত ক্ষমতা আমাদেয় পক্ষে উপস্থিত অসুবিধার কারণ যেমনই হৌক্‌, তাহা আমাদের পক্ষে ছদ্মবেশী অভিসম্পাত, এ কথা স্বীকার করিতে আমাদের যত বিলম্ব হইবে, আমাদের মোহজাল ততই দুশ্ছেদ্য হইয়া উঠিতে থাকিবে।

 অতএব আর দ্বিধা না করিয়া আমাদের গ্রামের স্বকীয় শাসনকার্য্য আমাদিগকে নিজের হাতে লইতেই হইবে। সরকারী পঞ্চায়েতের মুষ্টি অমাদের পল্লীর কণ্ঠে দৃঢ় হইবার পূর্ব্বেই আমাদের নিজের পল্লিপঞ্চায়েৎকে জাগাইয়া তুলিতে হইবে। চাষীকে আমরাই রক্ষা করিব, তাহার সম্ভানদিগকে আমরাই শিক্ষা দিব, কৃষির উন্নতি আমরাই সাধন করিব, গ্রামের স্বাস্থ্য আমরাই বিধান করিব এবং সর্ব্বনেশে মামলার হাত হইতে আমাদের জমিদার ও প্রজাদিগকে আমরাই বাঁচাইব। এ সম্বন্ধে রাজার সাহায্য লইবার কল্পনাও যেন আমাদের মাথায় না, আসে—কারণ, এস্থলে সাহায্য লইবার অর্থই দুর্ব্বলের স্বাধীন অধিকারের মধ্যে প্রবলকে ডাকিয়া আনিয়া বসানো।

 একবার বিবেচনা করিয়া দেখিবেন, বিদেশী শাসনকালে বাংলাদেশে যদি এমন কোনো জিনিষের সৃষ্টি হইয়া থাকে, যাহা লইয়া বাঙালী যথার্থ গৌরব করিতে পারে, তাহা বাংলাসাহিত্য। তাহার একটা প্রধান কারণ, বাংলাসাহিত্য সরকারের নেমক খায় নাই। পূর্ব্বে প্রত্যেক বাংলা বই সরকার তিনখানি করিয়া কিনিতেন, শুনিতে পাই