পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
আত্মশক্তি।

সরের বিপ্লবে, উৎপীড়নে, পরাধীনতায়, অধঃপতনের শেষ সীমায় তলাইয়া যাই নাই, এখনো যে আমাদের নিম্নশ্রেণীর মধ্যে সাধুতা ও ভদ্রমণ্ডলীর মধ্যে মনুষ্যত্বের উপকরণ রহিয়াছে, আমাদের আহারে সংযম এবং ব্যবহারে শীলতা প্রকাশ পাইতেছে, এখনো যে আমরা পদে পদে ত্যাগ স্বীকার করিতেছি, বহুদুঃথের ধনকে সকলের সঙ্গে ভাগ করিয়া ভোগ করাই শ্রেয়ঃ বলিয়া জানিতেছি, সাহেবের বেহারা সাতটাকা বেতনের তিনটাকা পেটে খাইয়া চারটাকা বাড়ী পাঠাইতেছে, পনেরো টাকা বেতনের মুহুরি নিজে আধমরা হইয়া ছোটভাইকে কলেজে পড়াইতেছে—সে কেবল আমাদের প্রাচীন সমাজের জোরে। এ সমাজ আমাদিগকে সুখকে বড় বলিয়া জানায় নাই—সকল কথাতেই, সকল কাজেই, সকল সম্পর্কেই, কেবল কল্যাণ, কেবল পুণ্য এবং ধর্ম্মের মন্ত্র কাণে দিয়াছে। সেই সমাজকেই আমাদের সর্ব্বোচ্চ আশ্রয় বলিয়া তাহার প্রতিই আমাদের বিশেষ করিয়া দৃষ্টিক্ষেপ করা আবশ্যক।

 কেহ কেহ বলিবেন, সমাজ ত আছেই, সে ত আমাদের পূর্ব্বপুরুষ গড়িয়া রাখিয়াছেন, আমাদের কিছুই করিবার নাই।

 এইখানেই আমাদের অধঃপতন হইয়াছে। এইখানেই বর্ত্তমান য়ুরোপীয় সভ্যতা বর্ত্তমান হিন্দুসভ্যতাকে জিতিয়াছে।

 য়ুরোপের নেশন একটি সজীব সত্তা। অতীতের সহিত নেশনের বর্ত্তমানের যে কেবল জড় সম্বন্ধ, তাহা নহে—পূর্ব্বপুরুষ প্রাণপাত করিয়া কাজ করিয়াছে এবং বর্ত্তমান পুরুষ চোখ বুজিয়া ফলভোগ করিতেছে তাহা নহে। অতীত-বর্ত্তমানের মধ্যে নিরত্তর চিত্তের সম্বন্ধ আছে— অখণ্ড কর্ম্মপ্রবাহ চলিয়া আসিতেছে। এক অংশ প্রবাহিত, আর এক অংশ বদ্ধ, এক অংশ প্রজ্বলিত, অপরাংশ:নির্ব্বাপিত, এরূপ নহে। সে হইলে ত সম্বন্ধবিচ্ছেদ হইয়া গেল— জীবনের সহিত মৃত্যুর কি সম্পর্ক?

 কেবলমাত্র অলসভক্তিতে যোগসাধন করে না —বরং তাহাতে দুরে