পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশীয় রাজ্য।
১৬৯

যেখানে একটা জিনিষের আগাগোড়া নাই,—কেবল কতকগুলা খাপ্‌ছাড়া দৃষ্টান্ত আছে মাত্র, সেখানে সে জিনিষের পরিচয়লাভের চেষ্টা করা বিড়ম্বনা। এই অসম্পূর্ণ শিক্ষায় আমাদের দৃষ্টি নষ্ট করিয়া দেয়— পরের দেশের ভালটা ত শিখিতেই পারি না, নিজের দেশের ভালটা দেখিবার শক্তি চলিয়া যায়।

 আর্টস্কুলে ভর্ত্তি হইয়াছি, কিন্তু আমাদের দেশে শিল্পকলার আদর্শ যে কি, তাহা আমরা জানিই না। যদি শিক্ষার দ্বারা ইহার পরিচয় পাইতাম, তবে যথার্থ একটা শক্তিলাভ করিবার সুবিধা হইত। কারণ, এ আদর্শ দেশের মধ্যেই আছে—একবার যদি আমাদের দৃষ্টি খুলিয়া যায়, তবে ইহাকে আমাদের সমস্ত দেশের মধ্যে, থালায়, ঘটিতে, বাটিতে, ঝুড়িতে, চুপ্‌ড়িতে, মন্দিরে, মঠে, বসনে, ভূষণে, পটে, গৃহভিত্তিতে নানা-অঙ্গ প্রত্যঙ্গ-পরিপূর্ণ একটি সমগ্রমূর্ত্তিরূপে দেখিতে পাইতাম, ইহার প্রতি আমাদের সচেষ্ট চিত্তকে প্রয়োগ করিতে পারিতাম— পৈতৃক সম্পত্তি লাভ করিয়া তাহাকে ব্যবসায়ে খাটাইতে পারিতাম।

 এই কারণে, আমাদের শিক্ষার অবস্থায় বিলাতী চিত্রের মোহ জোর করিয়া ভাঙিয়া দেওয়া ভাল। নহিলে নিজের দেশে কি আছে, তাহা দেখিতে মন যায় না—কেবলি অবজ্ঞায় অন্ধ হইয়া যে ধন ঘরের সিন্ধুকে আছে, তাহাকে হারাইতে হয়।

 আমরা দেখিয়াছি, জাপানের একজন সুবিখ্যাত চিত্ররসজ্ঞ পণ্ডিত এদেশের কীটদষ্ট কয়েকটি পটের ছবি দেখিয়া বিস্ময়ে পুলকিত হইয়াছেন—তিনি একখানি পট এখান হইতে লইয়া গেছেন, সেখানি কিনিবার জন্য জাপানের অনেক গুণজ্ঞ তাঁহাকে অনেক মূল্য দিতে চাহিয়াছিল, কিন্তু তিনি বিক্রয় করেন নাই।

 আমরা ইহাও দেখিতেছি, য়ুরোপের বহুতর রসজ্ঞ ব্যক্তি আমাদের অখ্যাত দোকানবাজার ঘাঁটিয়া মলিন ছিন্নকাগজের ছিত্রপট বহুমূল্য