পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
আত্মশক্তি।

আর একবার প্রবাহিত করিতে পারেন, তবে এই শস্যশ্যামলা বাংলার অন্তঃকরণ দিনে দিনে শুষ্ক মরুভূমি হইয়া যাইবে না।

 আমাদিগকে এ কথা মনে রাখিতে হইবে যে, যে সকল বড় বড় জলাশয় আমাদিগকে জলদান, স্বাস্থ্যদান করিত, তাহারা দূষিত হইয়া কেবল যে আমাদের জলকষ্ট ঘটাইয়াছে, তাহা নহে, তাহারা আমাদিগকে রোগ ও মৃত্যু বিতরণ করিতেছে— তেম‍্নি আমাদের দেশে যে সকল মেলা ধর্ম্মের নামে প্রচলিত আছে, তাহাদেরও অধিকাংশ আজকাল ক্রমশ দূষিত হইয়া কেবল যে লোকশিক্ষার অযোগ্য হইয়াছে, তাহা নহে, কুশিক্ষারও আকর হইয়া উঠিয়াছে। উপেক্ষিত শস্যক্ষেত্রে শস্যও হইতেছে না, কাঁটাগাছও জন্মিতেছে। এমন অবস্থায় কুৎসিত আমোদের উপলক্ষ্য এই মেলাগুলিকে যদি আমরা উদ্ধার না করি, তবে স্বদেশের কাছে, ধর্ম্মের কাছে অপরাধী হইব।

 এ কথা শুনিবামাত্র যেন আমাদের মধ্যে হঠাৎ একদল লোক অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া না ওঠেন —এ কথা না বলিয়া বসেন যে, এই মেলাগুলার প্রতি গবর্মেণ্টের অত্যন্ত ঔদাসীন্য দেখা যাইতেছে—অতএব আমরা সভা করিয়া কাগজে লিখিয়া প্রবলবগে গবর্মেণ্টের সাঁকো নাড়াইতে শুরু করিয়া দিই—মেলাগুলার মাথার উপরে দলবল-আইন-কানুন-সমেত পুলিশ কমিশনার ভাঙিয়া পড়ুক—সমস্ত একদমে পরিস্কার হইয়া যাক্‌। ধৈর্য্য ধরিতে হইবে,—বিলম্ব হয়, বাধা পাই, সেও স্বীকার, কিন্ত এ সমস্ত আমাদের নিজের কাজ। চিরকাল ঘরের লক্ষ্মী আমাদের ঘর নিকাইয়া আসিয়াছেন, —ম্যুনিনিসিপালিটির মজুর নয়। ম্যুনিসিপালিটির সরকারি ঝাঁটায় পরিস্কার করিয়া দিতে পারে বটে, কিন্তু লক্ষ্মীর সম্মার্জ্জনীতে পবিত্র করিয়া তোলে, এ কথা আমরা যেন না ভুলি।

 আমাদের দিশী লোকের সঙ্গে দিশী ধারায় মিলিবার যে কি উপলক্ষ্য