পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেশন্‌ কি?

 ভৌগোলিক অর্থাৎ প্রাকৃতিক সীমাবিভাগ নেশনের ভিন্নতাসাধনের একটা প্রধান হেতু, সে কথা স্বীকার করিতেই হইবে। নদীস্রোতে জাতিকে, বহন করিয়া লইয়া গেছে, পর্ব্বতে তাহাকে বাধা দিয়াছে। কিন্তু তাই বলিয়া কি কেহ ম্যাপে আঁকিয়া দেখাইয়া দিতে পারে, ঠিক কোন্ পর্য্যন্ত কোন্ নেশনের অধিকার নির্দ্দিষ্ট হওয়া উচিত। মানবের ইতিহাসে প্রাকৃতিক সীমাই চূড়ান্ত নহে। ভূখণ্ডে, জাতিতে, ভাষায়, নেশন্ গঠন করে না। ভূখণ্ডের উপর যুদ্ধক্ষেত্র ও কর্ম্মক্ষেত্রের পত্তন হইতে পারে, কিন্তু নেশনের অন্তঃকরণটুকু ভূখণ্ডে গড়ে না। জনসম্প্রদায় বলিতে যে পবিত্র পদার্থকে বুঝি, মনুষ্যই তাহার শ্রেষ্ঠ উপকরণ। সুগভীর-ঐতিহাসিক-মহনজাত ‘নেশন্‌’ একটি মানসিক পদার্থ, তাহা একটি মানসিক পরিবার, তাহা ভূখণ্ডের আকৃতির দ্বারা আবদ্ধ নহে।

 দেখা গেল, জাতি, ভাষা, বৈষয়িক স্বার্থ, ধর্ম্মের ঐক্য ও ভৌগলিক সংস্থান, নেশন-নামক মানসপদার্থ সৃজনের মূল উপাদান নহে। তবে তাহার মূল উপাদান কি?

 নেশন একটি সজীব-সত্তা, একটি মানস পদার্থ। দুইটি জিনিষ এই পদার্থের অন্তঃপ্রকৃতি গঠিত করিয়াছে। সেই দুটি জিনিষ বস্তুত একই। তাহার মধ্যে একটি অতীতে অবস্থিতি, আর একটি বর্ত্তমানে। একটি হইতেছে—সর্ব্বসাধারণের প্রাচীন স্মৃতিসম্পদ্; আর একটি, পরস্পর সম্মতি, একত্রে বাস করিবার ইচ্ছা,—যে অথণ্ড উত্তরাধিকার হস্তগত হইয়াছে, তাহাকে উপযুক্ত ভাবে রক্ষা করিবার ইচ্ছা। মানুষ উপস্থিতমত নিজেকে হাতে হাতে তৈরি করে না। নেশনও সেইরূপ সুদীর্ঘ অতীতকালের প্রয়াস, ত্যাগস্বীকার এবং নিষ্ঠা হইতে অভিব্যক্ত হইতে থাকে। আমরা অনেকটা পরিমাণে আমাদের পূর্ব্বপুরুষের দ্বারা পূর্ব্বেই গঠিত হইয়া আছি। অতীতের বীর্য্য, মহত্ত্ব,