পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১১৮

আধুনিক সাহিত্য

কবিদিগের গানগুলিও কাব্য—কেবল চারি দিকে উড়িয়া ছড়াইয়া পড়িবার জন্য সুরগুলি তাহাদের ডানাস্বরূপ হইয়াছিল। কবিরা যে কাব্যরচনা করিয়াছেন সুর তাহাই ঘোষণা করিতেছে মাত্র।

 বঙ্গদেশে কীর্তনে কাব্য ও সংগীতের সম্মিলন এক আশ্চর্য আকার ধারণ করিয়াছে; তাহাতে কাব্যও পরিপূর্ণ এবং সংগীতও প্রবল। মনে হয় যেন ভাবের বোঝাই পূর্ণ সোনার কবিতা, ভরা সুরের সংগীতনদীর মাঝখান দিয়া বেগে ভাসিয়া চলিয়াছে। সংগীত কেবল যে কবিতাটিকে বহন করিতেছে তাহা নহে, তাহার নিজেরও একটা ঐশ্বর্য এবং ঔদার্য এবং মর্যাদা প্রবলভাবে প্রকাশ পাইতেছে।

 আমাদের সমালোচ্য গ্রন্থখানিতে- উভয় শ্রেণীরই গান দেখা যায়। ইহার মধ্যে কতকগুলি গান আছে যাহা সুখপাঠ্য নহে, যাহার ছন্দ ও ভাববিন্যাস সুরতালের অপেক্ষা রাখে—সেগুলি সাহিত্যসমালোচকের অধিকার-বহিরভূত। আর-কতকগুলি গান আছে যাহা কাব্য হিসাবে অনেকটা সম্পূর্ণ, যাহা পাঠ মাত্রেই হৃদয়ে ভাবের উদ্রেক ও সৌন্দর্যের সঞ্চার করে। যদিচ সে-গানগুলির মাধুর্যও সম্ভবত সুরসংযোগে অধিকতর পরিস্ফুটতা, গভীরতা এবং নূতনত্ব লাভ করিতে পারে, তথাপি ভালো এনগ্রেভিং হইতে তাহার আদর্শ অয়েলপেন্টিঙের সৌন্দর্য যেমন অনেকটা অনুমান করিয়া লওয়া যায় তেমনি কেবলমাত্র সেই সকল কবিতা হইতে গানের সমগ্র মাধুর্য আমরা মনে মনে পূরণ করিয়া লইতে পারি। উদাহরণস্বরূপে ‘একবার দেখে যাও, দেখে যাও কত দুখে যাপি দিবানিশি’ কীর্তনটির প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে ইচ্ছা করি। ইহা বেদনায় পরিপূর্ণ, অনুরাগে অনুনয়ে পরিপ্লুত। পাঠ করিতে করিতে সঙ্গে সঙ্গে ইহার আকুতিপূর্ণ সংগীতটি আমাদের কল্পনায় ধ্বনিত হইতে থাকে। সম্ভবত যে সুরে এই গান বাঁধা হইয়াছে তাহা আমাদের কল্পনার আদর্শের সহিত তুলনীয় হইতে