বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস
১৩৯

গন্ধ পাউ’, ইহারা তেমনি কোথাও এক টুকরা নূতন জমির সন্ধান পাইলেই দলে দলে চীৎকার করিয়া উঠে ‘হাঁউ মাঁউ খাঁউ মাটির গন্ধ পাউ'। উত্তর আমেরিকার ক্লণ্ডাইক-নামক দুর্গম তুষারমরুর মধ্যে স্বর্ণখনির সংবাদ পাইয়া লোভোন্মত্ত নরনারীগণ দীপশিখালব্ধ পতঙ্গের মতো কেমন উর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়াছে—পথের বাধা, প্রাণের ভয়, অন্নকষ্ট, কিছুতেই তাহাদিগকে রোধ করিতে পারে নাই—সে বৃত্তান্ত সংবাদপত্রে সকলেই পাঠ করিয়াছেন। এই-যে অচিন্তনীয় কষ্টসাধন ইহাতে দেশের উন্নতি হইতে পারে, কিন্তু ইহার লক্ষ্য দেশের উন্নতি, জ্ঞানের অর্জন অথবা আর-কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নহে—ইহার উদ্দীপক দুর্দান্ত লোভ। দুর্যোধন প্রমুখ কৌরবগণ যেমন লোভের প্ররোচনায় উত্তরের গোগৃহে ছুটিয়াছিল ইহারাও তেমনি ধরণীর স্বর্ণরস দোহন করিয়া লইবার জন্য মৃত্যুসংকুল উত্তরমেরুর দিকে ধাবিত হইয়াছে।

 অধিক দিনের কথা নহে, ১৮৭১ খৃস্টাব্দে একটি ইংরাজ দাসদস্যু-ব্যবসায়ী জাহাজে কিরূপ ব্যাপার ঘটিয়াছিল তাহার বর্ণনা The Wide World Magazine নামক একটি নূতন সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। ফিজিদ্বীপে যুবোপীয় শস্যক্ষেত্রে মনুষ্য-পিছু তিন পাউন্‌ড্‌, করিয়া মূল্য দেওয়া হইত। সেই লোভে একদল দাসচৌর যে কিরূপ অমানুষিক নিষ্ঠুরতার সহিত দক্ষিণ সামুদ্রিক দ্বীপপুঞ্জে মনুষ্যশিকার করিত এবং একদা ষাট-সত্তর জন বন্দীকে কিরূপ পিশাচের মতো হত্যা করিয়া সমুদ্রের হাঙর দিয়া খাওয়াইয়াছিল, তাহার নিদারুণ বিবরণ পাঠ করিলে খৃস্টান মতের ‘অনন্ত নরক' দণ্ডে বিশ্বাস জন্মে।

 যে-সকল জাতি বিশ্ববিজয়ী, যাহাদের অসন্তোষ এবং আকাক্ষার সীমা নাই, তাহাদের সভ্যতার নিম্নকক্ষে শৃঙ্খলবদ্ধ হিংস্রতা ও উদ্ধৃঙ্খল লোভের যে একটা পশুশালা গুপ্ত রহিয়াছে, মাঝে মাঝে তাহার আভাস পাইলে কণ্টকিত হইতে হয়।