পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাকার ও নিরাকার
১৪৭

other-worldliness নাম দিয়াছেন। অর্থাৎ সেটা পারলৌকিক বৈষয়িকতা, তাহা আধ্যাত্মিকতা নহে। যাহাদের সেই দিকে লক্ষ্য সাকার নিরাকার তাহাদের পক্ষে উপলক্ষ মাত্র। সুতরাং হাতের কাছে যেটা থাকে, যাহাতে সুবিধা পায়, দশজনে যেটা পরামর্শ দেয়, তাহাই অবলম্বন করিয়া ধর্মচতুর লোক পুণ্যের খাতায় লাভের অঙ্ক জমা করিতে থাকেন। নিরাকারবাদী এবং সাকারবাদী উভয় দলেই তেমন লোক ঢের আছে।

 কিন্তু আধ্যাত্মিকতা যাহাদের প্রকৃতির সহজ ধর্ম, সংসার যাহাদিগকে তৃপ্ত ও বিক্ষিপ্ত করিতে পারে না, যে দিকেই স্থাপন কর কম্পাসের কাটার মতো যাহাদের মন এক অনির্বচনীয় চুম্বক-আকর্ষণে অনন্তের দিকে আপনি ফিরিয়া দাড়ায়, জগদীশ্বরকে বাদ দিলে যাহাদের নিকট আমাদের স্থিতিগতি চিন্তাচেষ্টা ক্রিয়াকর্ম একেবারেই নিরর্থক এবং সমস্ত জগদ্‌ব্যাপার নিরবচ্ছিন্ন বিভীষিকা, যাহারা অন্তরাত্মার মধ্যে পরমাত্মার প্রত্যক্ষ আনন্দ উপভোগ করিয়াই বুঝিতে পারিয়াছেন যে ‘আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে, আনন্দেন জানি জীবন্তি, আনন্দং প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি’—সাধনা তাঁহাদের নিকট দুঃসাধ্য নহে এবং তাহারা আপনাকে এবং আপনার ঈশ্বরকে ভুলাইয়া সংক্ষেপে কার্যোদ্ধার করিতে চাহেন না—কারণ, নিত্যসাধনাতেই তাহাদের সুখ, নিয়ত-প্রয়াসেই তাহাদের প্রকৃতির পরিতৃপ্তি।

 সেইরূপ কোনো স্বভাবভক্ত যখন মূর্তিপূজার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন তখন তিনি আপন অসামান্য প্রতিভাবলে মূর্তিকে অমূর্ত করিয়া দেখিতে পারেন, তাহার প্রত্যক্ষবর্তী কোনো সীমা তাহাকে অসীমের নিকট হইতে কাড়িয়া রাখিতে পারে না; তাহার চক্ষু যাহা দেখে তাহার মন তাহাকে বিদ্যুদ্‌বেগে ছাড়াইয়া চলিয়া যায়, বাহিরের উপলক্ষ তাঁহার নিকট কেবল অভ্যাসক্রমে থাকে মাত্র, তাহাকে দূর করিবার