জীবানন্দ তাহার মুখে হাত দিয়া বলিল, “সর্ব্বনাশ! সর্ব্বনাশ! অমন কথা মুখে এনোনা। ছাড়! ছাড়! আমার ঘাট হইয়াছে, ছাড়।”
শান্তি ছাড়ে না; আরও চেঁচায়, শান্তির কাছে জোর করিয়া ছাড়ানও সহজ নয়। জীবানন্দ যোড়হাত করিয়া বলিতে লাগিল “তোমার পায়ে পড়ি, ছাড়!” শেষ স্ত্রীলোকের আর্ত্তনাদে অরণ্য পরিপূরিত হইয়া গেল।
এ দিকে মঠের গোঁসাইরা স্ত্রীলোকের প্রতি অত্যাচার হইতেছে শুনিয়া, অনেকে ধুনুচির ভিতর প্রদীপ জালিয়া লাঠি সোঁটা লইয়া বাহির হইলেন। দেখিয়া জীবানন্দ থর থর কাঁপিতে লাগিল। শান্তি বলিল, “অত কাপিতেছ কেন? তুমি ত বড় ভীত পুরুষ! আবার লোকে তোমাকে বলে মহাবীর?”
গোঁসাইরা আলো লইয়া নিকটবর্ত্তী হইল দেখিয়া জীবানন্দ সকাতরে বলিলেন, “আমি আতিশয় কাপুরুষ, তুমি আমায় ছাড়, আমি পলাই।”
শান্তি। জোর করিয়া ছাড়াও না।
জীবানন্দ লজ্জায় স্বীকার করিতে পারিলেন না যে তিনি স্ত্রীলোকের জোরে পারিতেছেন না। বলিলেন,
“তুমি বড় পাপিষ্ঠা।”
শান্তি তখন মুচকি হাসিয়া বিলোল কটাক্ষ ক্ষেপণ করিয়া বলিল,
“প্রাণাধিক! আমি তোমার প্রতি অতিশয় আসক্ত। তোমার দাসী হইব বলিয়াই এখানে আসিয়াছি, আমায় গ্রহণ করিবে, স্বীকার কর, ছাড়িয়া দিতেছি।”
জীব। দূর হ পাপিষ্ঠা! দূর হ পাপিষ্ঠা! অমন কথা আমাকে কাণে শুনিতে নাই।