পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ।
৪৯

শব্দ নাই, চক্ষুঃ নিমিলিত হইল, অঙ্গ শীতল হইল, মহেন্দ্র বুঝিলেন যে, কল্যাণী “হরে মুরারে” ডাকিতে ডাকিতে বৈকুণ্ঠধামে গমন করিয়াছেন। তখন পাগলের ন্যায় উচ্চৈঃস্বরে কানন বিকম্পিত করিয়া, পশুপক্ষিগণকে চমকিত করিয়া মহেন্দ্র ডাকিতে লাগিলেন,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 সেই সময়ে কে আসিয়া তাঁহাকে গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া, তাঁহার সঙ্গে তেমনি উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিল,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 তখন সেই অনন্তের মহিমায়, সেই অনন্ত অরণ্যমধ্যে, অনন্তপথগামিনীর শরীরসম্মুখে দুই জনে অনন্তের নাম গীত করিতে লাগিলেন। পশু পক্ষী নীরব, পৃথিবী অপূর্ব্ব শোভাময়ী—এই চরমগীতির উপযুক্ত মন্দির। সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে কোলে লইয়া বসিলেন।


ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ।

 এদিকে রাজধানীতে রাজপথে বড় হুলস্থূল পড়িয়া গেল। রব উঠিল যে, রাজসরকার হইতে কলিকাতায় যে খাজনা চালান যাইতেছিল, সন্ন্যাসীরা তাহা মারিয়া লইয়াছে। তখন রাজাজ্ঞানুসারে সন্ন্যাসী ধরিতে সিপাহী বরকন্দাজ ছুটিতে লাগিল। এখন সেই দুর্ভিক্ষ-পীড়িত প্রদেশে সে সময়ে প্রকৃত সন্ন্যাসী বড় ছিল না। কেন না তাহারা ভিক্ষোপজীবী; লোকে আপনি খাইতে পায় না, সন্ন্যাসীকে ভিক্ষা দিবে কে? অতএব প্রকৃত সন্ন্যাসী যাহারা তাহারা সকলেই পেটের দায়ে কাশী প্রয়াগাদি অঞ্চলে পলায়ন করিয়াছিল। কেবল সন্তানেরা ইচ্ছানুসারে সন্ন্যাসিবেশ