শান্তির অল্পবয়সে, অতি শৈশবে মাতৃবিয়োগ হইয়াছিল। যে সকল উপাদানে শান্তির চরিত্র গঠিত, ইহা তাহার মধ্যে একটি প্রধান। তাহার পিতা অধ্যাপক ব্রাহ্মণ ছিলেন। র্তাহার গৃহে অন্ত স্ত্রীলোক কেহ ছিল না।
কাজেই শান্তির পিতা যখন টোলে ছাত্রদিগকে পড়াইতেন, শান্তি গিয় তাহার কাছে বসিয়া থাকিত। টোলে কতকগুলি ছাত্র বাস করিত; শাস্তি অন্য সময়ে। তাহাদিগের কাছে বসিয়া খেলা করিত, তাহাদিগের কোলে পিঠে চড়িত; তাহারাও শান্তিকে আদর করিত।
এইরূপ শৈশবে নিয়ত পুরুষসাহচর্য্যের প্রথম ফল এই হইল যে, শান্তি মেয়ের মত কাপড় পরিতে শিখিল না, অথবা শিখিয়া পরিত্যাগ করিল। ছেলের মত কোচা করিয়া কাপড় পরিতে আরম্ভ করিল, কেহ কখন মেয়ে কাপড় পরাইয়া দিলে, তাহা খুলিয়। ফেলিত, আবার কোচা করিয়া পরিত। টোলের ছাত্রেরা খোপা বাধে না; অতএব শান্তিও কখন খোপা বাধিত ন!—কে বা তার খোপা বাধিয়া দেয়? টোলের ছাত্রের কাঠের চিরণী দিয়া তাহার চুল আঁচড়াইয়া দিত, চুলগুলা কুণ্ডলী করিয়া শাস্তির পিঠে, কাধে, বাহুতে ও গালের উপর জ্বলিত। ছাত্রেরা ফোটা করিত, চন্দন মাখিত; শান্তিও ফোট। করিত, চন্দন মাখিত। যজ্ঞোপবীত গলায় দিতে পাইত না বলিয়া শাস্তি বড় কাদিত। কিন্তু সন্ধ্যাহিকের সময়ে ছাত্রদিগের কাছে বসিয়া, তাহাদের অনুকরণ করিতে ছাড়িত না। ছাত্রের অধ্যাপকের অবর্তমানে, অশ্লীল সংস্কৃতের দুই চারিট বুক্নি দিয়া, দুই একটা আদিরসাভিত গল্প করিতেন, টিয়া পাখীর মত শান্তি সেগুলিও শিখিল—টিয়া পাখীর মত, তাহার অর্থ কি, তাহা কিছুই জানিত না।
দ্বিতীয় ফল এই হইল যে, শান্তি একটু বড় হইলেই ছাত্রেরা যাহা পড়িত, শাস্তিও তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে শিখিতে আরম্ভ করিল। ব্যাকরণের এক বর্ণ জানে না, কিন্তু ভট্টি, রঘু, কুমার, নৈষধাদির শ্লোক ব্যাখ্যা সহিত মুখস্থ করিতে লাগিল। দেখিয়া শুনিয়া,