পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবজাতক
১২৭

যা আছে বলছি শুনুন। পরলোকবাসী মানবাত্বার পাপপুণ্যের ফলভোগ যখন সমাপ্ত হয় তখন সে মর্ত্যলোকে পতিত হয় এবং মেঘে প্রবেশ করে জলময় রূপ পায়। সেই জল বৃষ্টি রূপে পত্র পুষ্প ফল মূল ঔষধ বনস্পতিতে সঞ্চারিত হয় এবং তা ভক্ষণের ফলে নরনারীর দেহে শুক্র ও শোণিত উৎপন্ন হয়। গর্ভধানকালে শুক্রের আধিক্যে পুরুষ, শোণিতের আধিক্যে স্ত্রী, এবং উভয়ের সমতায় ক্লীবের সৃষ্টি হয়। জরায়ুমধ্যস্থ ভ্রুণ প্রথম দিনে পঙ্কতুল্য, পাঁচ দিনে বুদবুদ, সাত দিনে পেশী, এক পক্ষে অর্বুদ, পঁচিশ দিনে ঘন, এবং এক মাসে কঠিন আকার পায়। দুই মাসে মস্তক, তিন মাসে গ্রীবা, চার মাসে ত্বক, পাঁচ মাসে নখ ও রোম, ছ মাসে চক্ষু কর্ণ নাসা আর মুখের সৃষ্টি হয়। সপ্তম মাসে ভ্রুণ স্পন্দিত হয়, অষ্টম মাসে বুদ্ধি যোগ হয়, এবং নবম মাসে সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পূর্ণতা পায়। জন্মের পরেই শিশুর অনুভূতি হয়। তার পর সে বৃদ্ধি পায়, প্রান্তন কর্ম অনুসারে সংসারে সুখদুঃখ ভোগ করে, এবং মৃত্যুর পরে পুনর্বার দেহান্তর পায়।

 পাঁচুবাবু বললেন, ওহে প্রফেসর অনদি, তোমাদের শাস্ত্রে কি বলে?

 বায়োলাজিস্ট অনাদি রায় বললেন, সত্যার্থি মশায় নেহাত মন্দ বলেন নি। আমরা যা জানি তা বলছি শুনুন। প্রথমে দুটি অতি ক্ষুদ্র কোষের সংযোগ, তা থেকে ক্রমশ অসংখ্য কোষের উৎপত্তি, তারই পরিণাম এই মানবদেহ। প্রথম কয়েক মাস ভ্রুণকে মানুষ বলে চেনা যায় না, মনে হয় মাছ টিকটিকি বা বেরাল-ছানা। কোটি কোটি বৎসরে মানুষের যে ক্রমিক রূপান্তর হয়েছে, জরায়ুস্থ ভ্রুণ যেন তারই সে হাত-পা নাড়ে, মাঝে মাঝে মাথা দিয়ে গর্ভধারণীকে গুতো মারে,