পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

মতন বলছ চক্রধর কাকা! গয়েশ্বরীর বয়েস যে আমার প্রায় ডবল। সেকালে কুলীন কন্যার অমন বিবাহ হত বটে, কিন্তু আমি তো পেশাদার পাণিগ্রাহী নই।

 চক্রধর বললেন, বেশ করে সব দিক ভেবে দেখ কাশী বাবাজী। মেয়েটি অতি নিষ্ঠাবতী, সব রকম বার ব্রত পালন করে, মায় আমড়াষষ্ঠী পর্যন্ত। দরজীর দোকান চালায় বটে, কিন্তু ওর চালচলন তোমারই মতন সেকেলে। দোকানটা তোমারই হাতে আসবে, তোমার আয় বেড়ে যাবে।

 —কিন্তু বয়েসের যে আকাশ-পাতাল তফাত।

 —খুব ঠিক কথা। তোমার ইতিহাস যা বলেছ তাতে তোমার আসল বয়েস এখন দু শ পঞ্চাশের বেশী, আর গয়েশ্বরীর মোটে ঊনপঞ্চাশ। তোমার তুলনায় ও তো খুকী। আরও বুঝে দেখ, তোমার শরীরটাই জোয়ান, কিন্তু মনটা দু সেঞ্চুরি পিছিয়ে আছে। গয়েশ্বরীর সঙ্গে তোমার মনের মিল সহজেই হবে। আরও একটা কথা, আধুনিক পণ্ডিতরা বলেন, মেয়েদের পূর্ণযৌবন হয় পঞ্চাশের পরে। মর্তমান বলা খেয়েছ তো? পাকলেই সুতার হয় না। যার খোসাটি কালচিটে হয়ে কুঁচকে গেছে, শাঁসটি মজে গিয়ে একটু নরম হয়েছে, সেই পরিপক্ক কলাই অমৃত। মেয়েরাও সেই রকম। এখনকার পঞ্চাশীর কাছে তোমাদের সেকেলে ষোড়শী-টোড়শী দাঁড়াতেই পারে না।

 চক্রধরের যুক্তি শুনে কাশীনাথ ধীরে ধীরে বশে এলেন। একটু চিন্তা করে বললেন, আমি যখন মারা গিয়েছিলাম তখন আমার চতুর্থ পক্ষের স্ত্রী রাসেশ্বরীর বয়েস ছিল তোমার ভাগনী গয়েশ্বরীরই মতন। এখন মনে হচ্ছে রাসেশ্বরীই গয়েশ্বরী হয়ে ফিরে এসেছে। আচ্ছা, তুমি ঘটক লাগাতে পার।