পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

বক্ষ দুলে ফেঁপে উজান ডাকে। এহেন প্রেমের ব্যাপারে যারা উচিত অনুচিতের কথা বলে তারা নীতির ঠুলি চোখে রাতপেঁচা, তারা প্রকৃত প্রেমের ধারা কি বা জানে? প্রেম দূরে থাক, হীন কামের খেলায়ই মানুষ কতখানি অবশ হতজ্ঞান হয়ে পড়ে তার সন্ধান আমাদের হিন্দু সমাজের উন্নত কালের সমাজকাররা জানতেন! মনু পরাশরে তাই হিন্দু প্রায়শ্চিত্য বিধিতে দেখতে পাই শত শত রকম স্বাভাবিক অস্বাভাবিক মৈথুনের তালিকা ও তার জন্য কতই না হালকা হালকা প্রায়শ্চিত্য বিধি। কোন্ বিবাহকে তাঁরা বৈধ করে না নিয়েছিলেন, শ্রেণী বিভাগে তাহাদের নিকৃষ্ট স্থান দিলেও রাক্ষস বিবাহ অবধি ছিল সে যুগে বৈধ। তন্ত্র করে গেছেন যবনীকেই ও নষ্টা স্ত্রীকে সাধনার শ্রেষ্ঠ শক্তি। আর আজ আমরা কতখানি হৃদয়হীন, কতদূর অনুদার, তাই আমাদের সমাজ ভরে গেছে ব্যভিচারে, ভ্রূণহত্যায়, নারীঘাতে, আত্মহত্যার পাপে; মা বাপ আত্মজন নিজেদের নাড়ী ছেঁড়া বুকের মেয়েকে নিজের হাতে ঠেলে দিচ্ছে গণিকার পথে, নিজের হাতে তার হাতে তুলে দিচ্ছে বিষের পাত্র। মানুষ যেখানেই হয়েছে এই ভগবানের জগতে বিচারক সেইখানেই সে ধর্ম্মের সমাজের নামে সেজেছে শয়তান। সে নিষ্ঠুরতার তার অবধি নেই। হিংস্র বাঘের তবু নিষ্ঠুরতার সীমা আছে, সেও আপন সন্তান চেনে। কিন্তু ধর্ম্মের নামে যে অন্ধ হয় তার নিষ্ঠুরতাই কল্পনায় গড়েছে চৌষট্টি নরকের বিভীষিকা।

১০০