পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 “হ্যাঁ, মা তোমার জন্যে কেঁদে কেঁদে যে অন্ধ হবার দাখিল। চলো, একবার দেখা দেবে চলো। এতক্ষণ তোমায় বলিনি, ভাবলুম আগে একবার মনটা বুঝে দেখি।

 চিরদিনই আমি চুরিচামারী ও ষড়যন্ত্রে ত্বরিত-কর্ম্মা, এসব ক্ষেত্রে উপস্থিত দুষ্টবুদ্ধি কেমন যেন দরকার হ’লেই জুটে যায়। দু’জনে পরামর্শ করে ঠিক হ’লো টিফিনের সময় বাড়ীতে কাজ আছে অছিলায় হেডমাষ্টার মশাইএর কাছে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়া যাবে আর ঠিক সাড়ে চারটের সময় ভাল ছেলের মত যেন সোজা স্কুল থেকেই সুড় সুড় করে বাড়ী ফেরা যাবে। যে পরামর্শ সেই কাজ। হেডমাষ্টার আমায় খুব নীতিবাগীশ ভাল ছেলে বলে জানতেন, আমি মিথ্যা কথা বলবো এ তাঁর স্বপ্নের অগোচর। এক পাণ্ডার বাড়ীতে গিয়ে দেখি ঘরের দুয়োর ধরে আবেগকম্পিত হৃদয়ে জীর্ণা শীর্ণা মা আমার ছেলের প্রতীক্ষায় অনাহারে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে কোলে নেবেন কি, স্নেহাবেশে উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপতে লাগলেন, চোখ দুটি অশ্রু ধারায় ঝাপসা হয়ে গেল, কোন গতিকে আমাকে বুকে কুড়িয়ে নিয়ে নির্ব্বাক আবেগে সে কি ব্যাকুল তাঁর কান্না। স্নেহ ভালবাসা একটা সাইক্লোনের মত, ঠিক কুটোটুকুর মত অসহায় করে ঐ ঝড় আমাদের কোথায় যে নিয়ে ফেলে তা’ বলা শক্ত। একজন খুব বড় সাধিকা যোগসিদ্ধা মেয়েকে আমি দেখেছি একটি বেরালকে প্রাণ ঢেলে ভালবাসতে। অতবড় স্থির ধীর ধ্যানী মেয়ে যখন বার ঘণ্টা পরে হারানো

১০৫