পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

পারে? এই সব দেখে শুনে শ্রীঅরবিন্দের কথাই আমার ঠিক মনে হয়, মাতৃস্নেহ পুত্রবৎসলতা ও-সব হচ্ছে বাজে কথা, ওসব বৃত্তিই আসলে পশুবৃত্তি, দেহধর্ম্মে আপনি আসে এবং সহজে বিকৃত হয়, কারণ ও-সবের মূলেই রয়েছে স্বার্থ—নিতান্তই হীন ব্যক্তিগত স্বার্থ। খুব উদার মহামনা মানুষ ছাড়া ঠিক নিঃস্বার্থ ভাবে এ জগতে কেউ কাউকে ভালবাসে না, মা-বাপও নয়। সচরাচর ভালবাসা স্বার্থেরই একটা স্নায়বিক রূপ। নিঃস্বার্থ প্রেম জগতে বড়ই দুর্ল্লভ।

 সংসারে পশু-মা পশু-বাপ পশু-স্বামীই বেশী—হাজার সাধু ও ভদ্রলোক সেজেই তারা থাক না কেন। সমাজের ভয়, টাকার লোভ, কুল ভাঙার আশঙ্কা, বদনামের আতঙ্ক, নিজের জিদ ও পছন্দ অপছন্দের দোহাই—যা’ হোক একটা কিছু তুচ্ছ হেতুই যথেষ্ট। মানুষ তার মোহে ও বশে সব ভুলে যায়, চিরজীবনের শিক্ষা-দীক্ষা উদার মত ও আদর্শ সব বিসর্জন দিয়ে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। মানুষের স্নেহ বা প্রেম স্বর্গীয় আদৌ নয়, নিতান্তই মাটির জিনিস, স্বার্থে পঙ্কিল পশুধর্ম্ম।

 তবু কিন্তু এত হীনতার মাঝেও উদার মানুষও আছে। মা দেশোদ্ধারী সন্তানকে হাসিমুখে মৃত্যুর মুখে তুলে দিয়েছে এ চিত্র আজকের বাঙলা দেশে বিরল নয়। তাই বলি নিঃস্বার্থ সংস্কার মুক্ত মানুষও সংসারে আছে, তারাই নির্লিপ্ত, তারাই যোগী, ভাল মন্দ ‘সু’ ও ‘কু’র সামাজিক মনগড়া মূল্য তাদের সমতা ও ঔদার্য্য নষ্ট করতে পারে না। নিজের দেহ-

১৪০