পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

চাতাল নেশাড়েরা সেদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় দোকানের বন্ধ দরজায় প্রথমে বিস্ময়-বিমূঢ় ও পরে বিরস ম্লান মুখে ভিড় জমিয়ে ছিল নিশ্চয়ই। আমি তখন উড়ন্ত পাহাড় পর্ব্বত দু’ পাশে ফেলে, নদী নালা বন কান্তারের মেলার মধ্যে দিয়ে হু হু করে চলেছি আমার জীবনের নতুন রঙ্গভূমির দিকে।

 আমি যে মাণিকতলা বাগানের বোমাড়ে বারীন ঘোষ হতে চলেছি, সেই উদ্ভট বিপ্লবের প্রথম পুরোহিত হব বলেই যে আমার এত সাধের চায়ের দোকান আর মনোহারীর বিপণী দেখতে দেখতে আকাশ কুসুমের মত ফুটলো আর মিলিয়ে গেল তা’ তখন আমিই বা জানব কেমন করে? আজকের বিফল প্রণয়ী যদি বুঝতো তার আজকের এই মর্ম্ম ছেঁড়া বিরহ কালকের নতুন রূপের ডালী ষোড়শীর আসার আয়োজনেই, তা’ হ’লে তার এত সুখমাখা হা হুতাশ আর কলিজা নিঙড়ানো অশ্রুধারা ফুরিয়ে গিয়ে হয়তো গোঁফের কোণে চোরা হাসিই দেখা দিত। আমাদের সারা জীবনটা এত মিষ্ট, এতখানি কৌতূহলোদ্দীপক ও নিতুই নতুন এই জন্যেই যে, তার পাতাগুলি মোড়া আছে, একটির পর একটি অজানা পাত। উল্টে চলেছি আর গল্পের রসবস্তু গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে জমে চলেছে বলেই না পালার পর পালার সুখ দুঃখ হাসি অশ্রু বেদনা পুলক আমাদের চোখে এমন মর্ম্মান্তিক সত্যি হয়ে উঠছে। একটি ময়লা ক্যানভাসের ব্যাগ হাতে নিয়ে ট্রেণে যখন চেপেছি তখন মনে জাগছে টাকা নিয়ে ফিরে আসার আকাশ কুসুম, ফাঁকা মাঠের মাঝে সবুজ

১৬১