পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

রিক্ত মাটিফাটা ধান ক্ষেতের আলে আলে এখানে ওখানে যে সব পলাশ, বাবলা বা ঘন পাতার বুনো গাছ ঝোপ হয়েছিল তার কাছে গুলি-ভরা বন্ধুক হাতে আমরা চুপি চুপি এসে দাঁড়াতুম। কোথায় তাল পাকানো পাতার মাঝে তিতির ডাকছে, পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁসি দু’টিতে কোথায় বসে ডানা ঝাপটাচ্ছে, তা’ কান খাড়া করে ডাকটি শুনে দেখে ঠাহর কর্‌তে হবে। তারপর ঊষার স্তব্ধ স্নিগ্ধ আকাশ ফাটিয়ে একটা বিকট শব্দ আর পাখা ঝটাপটি কর্‌তে কর্‌তে একটার ঝোপের মধ্যে ঢুকে যাওয়া এবং হাত পা ডানা গুটিয়ে আর-একটার ঢিপ করে মাটিতে পড়া। লুব্ধ শিকারীর নিষ্ঠুর মন বুঝতো না কতখানি অশান্তি ও বীভৎসতায় সেই স্নিগ্ধ প্রসন্ন নিবিড় ঊষাকে মলিন করে তুলছি।

 রাঙা জবার মত সূর্যি পূব আকাশ রাঙিয়ে উঠলে পর আমরা পথ চলতে শুরু করতুম বাবলা গাছে ঘুঘু মারতে মারতে, পুকুরের পদ্মনাল ও পানফলের লতার মাঝে কাদা খোঁচা জলটুঙি পানকৌড়ির ছোট্ট চঞ্চল জীবনটি হঠাৎ ঘুচিয়ে দিতে দিতে, আকাশে উড়ন্ত বেলে হাঁসের পালে প্রাণঘাতী ছররা ছেড়ে তাদের দু’ একটাকে লাট খাইয়ে পেড়ে ফেলতে ফেলতে। ছররা খেয়ে বুনো পায়রা পড়তো অনেকটা দূর উড়ে গিয়ে হঠাৎ হাত পা গুটিয়ে টুপ করে, কাদা খোঁচা আর উড়তো না— সেইখানেই সে পড়তো ছোট্ট তার ছাই রঙের পাখা দু’টি কাঁপিয়ে লুটিয়ে লুটিয়ে, বড় সারস পড়তো লম্বা পা দু’টো দুম্‌ড়ে

১৬৯