পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

গেছে নগণ্য লোকেরই জনতায়। একটা উঁচু আদর্শ নিয়ে জীবন উৎসর্গ তাদের একজনও করে নি, এক আমি ছাড়া। প্রথমে আমি পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্ত্তি হই, সেখান থেকে ছ’মাসে প্রমোশন নিয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে উঠি, তারপর থেকেই দেওঘর স্কুলের ছাত্র জীবনে আমিই হই বড় বড় কাজে পালের গোদা। এই সময়ে যোগীন্দ্রবাবু প্রাণপাত করে দেওঘরে কুষ্ঠাশ্রম স্থাপন করছেন, তখনও তার রাজকুমারী কুষ্ঠাশ্রম নাম হয় নি। আমরা দরিদ্র ভাণ্ডার গড়ে বাড়ী বাড়ী হাঁড়ি রেখে চাল সংগ্রহ করে কুষ্ঠরোগী ও দুঃস্থ মানুষদের বিলোতুম। ডিবেটিং ক্লাব গড়ে ইতিহাস চর্চ্চা করতুম ও প্রবন্ধ লেখা আর বক্তৃতা দেওয়া শিখতুম, আমার কৈশোরের সে সব উদ্যমের আনন্দ ও নেশার ঘোর এখনও মনে পড়ে; আমার প্রাণ শক্তির বেগে আমি আমার কল্পনার রথের চাকায় বেঁধে টেনে নিয়ে চললুম প্রফুল্লুকে, দীনেশ্বরী প্রসাদকে, করালী-কিঙ্করকে, আশু বিশ্বাসকে, এমন কজনকে। তারা বোধ হয় আমায় ভালবাসতো বলেই সাড়া দেবার প্রাণপণ চেষ্টা করতো কিন্তু “স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম্মো ভয়াবহ”—সুতরাং এ পরধর্ম্ম আশ্রয় করে পরবর্ত্তী জীবনে তাদের একজনও টিঁকে থাকতে পারে নি।

 এই সময় আমি দু’জন অপূর্ব্ব মানুষের সঙ্গ ও স্পর্শ পাই। একজন বরিশালের অশ্বিনী বাবু আর একজন “রসলীলা” রচয়িতা ইন্দু বাবু। ঈশ্বর প্রেমে পাগলের মত হয়ে ইন্দু বাবু একবার পর্য্যটক হয়েছিলেন। সেই অবস্থায় নিজের বীণাটি হাতে এই

৯১