পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘরে কোনও দিন পা রেখেছেন? দেখেছেন অসংখ্য জঞ্জালের মাঝে জীবন্ত কঙ্কালের মিছিল, খুকখুক কাশি? এরাই তো সপরিবারে শেষ ডিনার খেতে বসে ফলিড়ল কি বেগন স্প্রে সাজিয়ে। এরাই পরম অবহেলায় নদীর স্রোতে একে একে ছুঁড়ে দেয় রক্তের সম্পর্কগুলো। রেল লাইনে সারি-সারি গলা পেতে অপেক্ষা করে মৃত্যুর। ঈশ্বর কখনই এদের থিদেয় ভাত-রুটির বিকল্প হয়ে ওঠে না; তাই চিরশান্তি পেতে বার বার এরা ঈশ্বরের চেয়ে মৃত্যুকেই কাম্য জ্ঞান করেছে।

 মণীন্দ্রবাবু, আপনি কি বাস্তবিকই মনে করেন, এই দুনীতিতে ভরা অসামোর সমাজ কাঠামোকে বজায় রেখেও মানুষের মনে শান্তি আনা সম্ভব? স্রেফ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে দুঃখ ভোলার মধ্য দিয়েই সম্ভব?

O

এই দুনীতিতে ভরা অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে বজায় রেখেও মানুষের মনে শান্তি আনা সম্ভব? স্রেফ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে দুঃখ ভোলার মধ্য দিয়েই সম্ভব?

O

 তাত্ত্বিকভাবেই তা সম্ভব নয়। কারণ, অসাম্য, শোষণ, বঞ্চনা থাকলে বঞ্চিত মানুষদের দুঃখ থাকবেই। মণীন্দ্রবাবু, এই সহজ-সরল সত্যকে আপনি কেন ভুলে থাকতে চাইছেন? আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন, আপনার এই ভুলের পরিণতি কী মারাত্মক হতে পারে? এর ফলে দারিদ্র্যের নগ্ন লাঞ্ছনায় নুয়ে পড়া বহু মানুষ তাদের উপর নেমে আসা প্রতিটি বঞ্চনাকে ‘ভাগের লিখন' ধরে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিবর্তে ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে থাকবে।


 মণীন্দ্রমোহন চক্রবর্তীর ঈশ্বরের সংজ্ঞা কী? তাঁরই কথায়, “ঈশ্বর আছেন সেই উপলব্ধি আমার হয়েছে। আপনি জিজ্ঞেস করবেন, কী করে? তার উত্তরে আমি বলব, এই যে জগৎ চলছে, এ তো শুধু শুধু নয়-কতকগুলো নিয়ম মেনে চলছে। কিন্তু কে সেই নিয়মগুলো তৈরি করেছেন? এই মহাবিশ্বে, প্রত্যেকেই আপন পথে আপন আপন নিয়ম মেনে ঘুরে চলেছে। নিয়ম না মানলে কী দারুণ সঙ্কট সৃষ্টি হত ভাবতেও পারি না।...তাহলে একটা শক্তি নিশ্চয় আছে যে শক্তি এই জিনিস ঘটাচ্ছে। বিশ্বজগতের সমস্ত নিয়ম তার সৃষ্টি, সে-ই সবকিছু চালাচ্ছে। মানুষের সাধ্য নেই তাকে অতিক্রম করে।”

 অর্থাৎ, মণীন্দ্রবাবুর বিশ্বাস মত, ঈশ্বর একটা শক্তি; যে প্রাকৃতিক নিয়মের নিয়ন্তা শক্তি। ঘুরিয়ে আমরা বলতে পারি, প্রকৃতিই তাঁর ঈশ্বর।

 অধ্যাপক চক্রবর্তীর জীবনে কখনও কি এমন কিছু ঘটেছে, যাতে তাঁর মনে হয়েছে—ঈশ্বর আছেন, এবং এ তারই প্রমাণ?

১৫০