পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ঈশ্বরের এই সংজ্ঞাকে কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ, এর মধ্যে একটা স্ববিরোধিতা রয়েছে। ঈশ্বর 'শক্তি' হলে ঈশ্বরের মস্তিষ্ক-স্নায়ুকোষ থাকার প্রশ্ন নেই। তাঁকে তুষ্ট করার জন্য মন্ত্র-তন্ত্র ইত্যাদি 'রিচ্যুয়াল' সব ব্যাপার-স্যাপারই অর্থহীন হতে বাধ্য। আর, ঈশ্বরের মানুষের মত চিন্তা করার ক্ষমতা আছে ধরে নিলে, ঈশ্বরকে একটা শক্তি সংজ্ঞায় বাঁধা যায় না।

O

ঈশ্বর 'শক্তি' হলে ঈশ্বরের মন্তিক-স্নায়ুকোষ থাকার প্রশ্ন নেই। তাঁকে তুষ্ট করার জন্য মন্ত্র-তন্ত্র ইত্যাদি ‘রিচ্যুয়াল' সব ব্যাপার-স্যাপারই অর্থহীন হতে বাধ্য।

O


এগারো: বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা ও নিয়ন্তক শক্তির আর এক নামই কি ঈশ্বর?

 “এই যে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে, বিশ্বের প্রতিটি কাজ-কর্মকে নিয়মের বাঁধনে বেঁধে রেখেই সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে যে শক্তি সেই শক্তিরই আর এক নাম ঈশ্বর।”—এমনতর যুক্তি পেশী ফোলাচ্ছে অভিজাত, ইণ্টালেকচুয়াল আর সেলিব্রেটিদের অজ্ঞতার জোরে। সাদা-মাটা যুক্তিতে নির্বোধ অজ্ঞতার জঞ্জাল ঝেটিয়ে সাফ করলেই স্পষ্টতর হয়ে ওঠে কিছু প্রশ্ন। আসুন, প্রশ্নগুলো নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখি।

 যুক্তির খাতিরে আমরা মেনে নিচ্ছি—স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক শক্তিরূপী ঈশ্বর এই মহাবিশ্ব এক সময় সৃষ্টি করেছিলেন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। ধরে নিচ্ছি, তারপর থেকে আজও ঈশ্বর মহাবিশ্বের সবকিছুকে সুনির্দিষ্ট এক নিয়মতন্ত্রের মধ্যে চালনা করে চলেছেন। সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ঘটিয়ে চলেছেন শক্তির রূপান্তর। আমরা এই বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করতে তিনটি বিষয় নিয়ে অতি সংক্ষেপে অতি প্রয়োজনীয় আলোচনাটুকু সেরে নেব।


 সময় বা কাল: সময় বা কালকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। অতীত বা ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। 'অতীত' বা 'ভূত' মানে—যা ঘটে গেছে। 'ভবিষ্যৎ'—যা ঘটবে। 'বর্তমান', অর্থাৎ যা ঘটে চলেছে। অতীত ও ভবিষ্যতের সন্ধিস্থলই হল 'বর্তমান'। আবার একথাও ঠিক, সময় এত দ্রুতগতিতে অতীতে চলে যায় যে 'বর্তমান' শব্দটি উচ্চারণ করার সময়টুকু পর্যন্ত 'বর্তমান' অপেক্ষা করে না। বস্তুত, এক সেকেণ্ডের লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময় ও সময় বা 'কাল' দাঁড়িয়ে থাকে না, 'বর্তমান' শব্দটিকে সার্থক করে তুলতে।

 আমরা বলি 'বর্তমান বছরে', 'বর্তমান দশকে', 'বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি' ইত্যাদি শব্দ। একইভাবে আমরা বলি—“মারাদোনা বিদ্যুৎগতিতে বলটা কাটিয়ে নিয়ে গেল"। কিন্তু এ'কথার মানে যেমন বাস্তবিকই মারাদোনার

১৭৪