পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আজকাল-এর পাতাতেই। কিন্তু সেই লৌকিক কৌশল বর্ণনার জন্য বর্তমানে আমার কলম গতিশীল নয়। এই সময় আমার সঙ্গে আলির যে দারুণ আড্ডা জমে উঠেছিল, তাতে আল্লাহর প্রসঙ্গ এসেছিল। প্রশ্ন রেখেছিলাম, “তোমার কি ধারণা, আল্লাহ পরম দয়ালু ও পরম মঙ্গলময়।”

 আলি দৃঢ় মত প্রকাশ করেছিলেন, “নিশ্চয়ই।”

 —“আল্লার ন্যায়পরায়ণতার উপর তোমার কতখানি বিশ্বাস আছে?”

 —“আমার অস্তিত্বে আমি যতখানি বিশ্বাস করি।”


 পুরীর জগৎগুরু শঙ্করাচার্য ঈশ্বর প্রসঙ্গে আমাকে যা বলেছিলেন, তাতে টেরিজা ও আলির সঙ্গে কাঁটায় কাঁটায় মিল ছিল। তখনও শঙ্করাচার্য নারীদের বেদ পড়ার অধিকার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েননি। প্রফুল্ল চিত্তে রাজনৈতিক নেতাদের মাথায় আপন পা ঠেকিয়ে এবং বাবরি মসজিদ বিতর্ক নিয়ে মাঝে-মধ্যে সাজেশন-টাজেশন দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গা ঘষাঘষির মধ্যে নিজের কর্মকাণ্ডকে কিঞ্চিত ব্যাপ্ত করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে দুটি জিনিস পোষার যেন হুজুগ লেগেছে। এক, কুকুর; দুই, গুরু। এমনই এক পরিবারে জগৎগুরুর আবির্ভাবের খবর পেয়ে ছুটতে হয়েছিল। জগৎগুরু শঙ্করাচার্যকে অনেক প্রশ্নের মধ্যে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলাম, ঈশ্বরের দয়া ও ন্যায়পরায়ণতা বিষয়ে। শঙ্করাচার্য স্পষ্ট মত প্রকাশ করেছিলেন-ঈশ্বর পরম দয়ালু। পরম মঙ্গলময়। শ্রেষ্ঠতম ন্যায়পরায়ণ।

 এমনতর উত্তর শুনে এর আগে টেরিজা ও আলির কাছে যে প্রশ্ন রেখেছিলাম, সেই প্রশ্নই রাখলাম, “তাত্ত্বিকভাবেই কারও পক্ষেই একই সঙ্গে ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হওয়া সম্ভব নয়। ন্যায় বিচারে যে মানুষের যেমনটি প্রাপ্য, তা পাল্টে দেয় ‘দয়া'। তাই একই সঙ্গে দয়ালু ও ন্যায়বিচারক হওয়া বাস্তবে আদৌ সম্ভব নয়। এমন একটি চরিত্র (যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঈশ্বর') শুধুমাত্র যুক্তিহীন কল্পনা বিলাসীদের পক্ষেই আঁকা সম্ভব। এবিষয়ে আপনার যুক্তি থাকলে রাখুন। আগ্রহের সঙ্গে শুনব।

 দ্বিতীয়ত তাত্ত্বিক ভাবেই ঈশ্বরকে ‘পরম মঙ্গলময় বলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যখন একজন নারী ধর্ষিতা হন, তখন সমাজের বা নারীটির কোন মঙ্গল সাধিত হয়, জানাবেন? প্রতিটি দুর্নীতির পিছনেই যদি ঈশ্বরের মঙ্গলাশিসকে মেনে নিতে হয়, তাহলে আপনারা সুনীতির উপদেশ-টুপদেশ দেন। কেন? একি আপনাদের স্ববিরোধিতা নয়? দুর্নীতির পিছনে ঈশ্বরের মঙ্গলাশিস আছে, আবার ঈশ্বর ন্যায়নীতির ধারক-বাহক-এমন একটা স্ববিরোধী চরিত্রের বাস্তব অস্তিত্ব একেবারেই অসম্ভব। তাই নয় কি?”

 তিন জনই আরও একটি বিষয়ে কাঁটায় কাঁটায় মিল দেখিয়ে ছিলেন। প্রত্যেকেই আমার প্রশ্নের ক্ষেত্রে কঠোর নীরবতা পালন করেছিলেন।

১৭৯