পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাঠামোর পরিবর্তন ঘটিয়ে সাম্যের সমাজ গড়ার কোনও চিন্তা ছিল না। তাই চার্বাক দর্শন গণশক্তি নির্ভর ও সক্রিয় রূপ ধারণ করতে পারেনি। এ'দেশের প্রাচীন ধর্মসূত্রগুলো যেমন পরিপূর্ণভাবে রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিল, চার্বাকবাদীরাও ছিল তেমনই সেই সময়কার রাজতন্ত্রকেন্দ্রীক শোষণ কাঠামোর সমর্থক। তাঁরাও মনে করতেন, “লোকসিদ্ধো ভবেদ্রাজা পরেশো নাপরঃ স্মৃতঃ"। অর্থাৎ রাজার উপরে কোনও পরমেশ্বর নেই।

O

এদেশের প্রাচীন ধর্মসূত্রগুলো যেমন পরিপূর্ণভাবে রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিল, চার্বাকবাদীরাও ছিল তেমনই সেই সময়কার রাজতন্ত্রকেন্দ্রীক শোষণ কাঠামোর সমর্থক।

O

 একজন মানবতাবাদীর মধ্যে দার্শনিক আত্মোপলব্ধি রয়েছে। সে যুক্তির পথ ধরে সব কিছুকে বিচার করে। তার সংঘর্ষের মধ্যেও থাকে সুন্দর সমাজ বিকাশের প্রেরণা; মানুষকে মানুষ করে তোলার প্রেরণা। অর্থাৎ, মানবতাবাদ নাস্তিকতাবাদের সঙ্গে বাড়তি কিছু।

 নিছক নাস্তিকতাবাদ যেহেতু এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী, সেহেতু এই মতবাদ কখনই মানুষের ‘সুগুণ' বা 'সুবৈশিষ্ট্য'-এর পরিচয় বহন করে না। শুধুমাত্র 'নাস্তিকতাবাদ’ বা ‘নিরীশ্বরবাদিতা' ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অবিশ্বাস মানুষের আদর্শ আচরণ বিধি বা আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতি হয়ে উঠতে পারে না। এবং শেষ পর্যন্ত 'নাস্তিকতাবাদ’ মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় গুণ হয়ে ওঠে না। অর্থাৎ, শেষতক 'নাস্তিকতাবাদ' মানুষের 'ধর্ম' হয়ে উঠতে পারে না।

O

শুধুমাত্র 'নাস্তিকতাবাদ’ বা ‘নিরীশ্বরবাদিতা’ ও ‘প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অবিশ্বাস' মানুষের আদর্শ অচিরণ বিধি বা আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতি হয়ে উঠতে পারে না।

O

 প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আপনারাই পারেন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, রাষ্ট্রশক্তি ও প্রচারমাধ্যমগুলোর পরিকল্পিত এক ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দিতে। জনতার মগজ ধোলাইয়ের জন্য খরচ করা বিপূল শ্রম ও ব্যয়কে ফালতু করে দিতে। আপনারাই পারেন মানুষের ধর্মকে মানুষের কাছে শুভকর, ইতিবাচক ও মানবিক করে তুলতে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আজ থেকে চিন্তায়, কথায়, লেখায় ‘ধর্ম'-এর সংজ্ঞা নিরূপণ করুন 'বৈশিষ্ট্য’ বা ‘গুণ'-এর নিরিখে। আর তবেই, এবং শুধুমাত্র তবেই, মানুষের একমাত্র 'ধর্ম' হয়ে উঠবে 'মনুষ্যত্ব' বা 'মানবতা।

১৯০