পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জমি বিলি করে, তারপরে কীহবে? উত্তর একটাই। জয়ের মধ্য দিয়ে 'নর্মদা বাঁচাও নান্দোলন'-এর পরিসমাপ্তি ঘটবে। আমাদের দেশের অসাম্যের সমাজ কাঠামোয় একটিও আঁচ না কেটেই পরিসমাপ্তি ঘটবে।

 'ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি' যে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সামিল হয়েছে, সে আন্দোলনের লক্ষ্য-অসাম্যের সমাজ কাঠামো ভেঙে সাম্যের সমাজ কাঠামো গড়ে তোলা। এবং তারপরও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে গতিশীল রাখা। কারণ, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান থেকে আমরা এই শিক্ষা নিয়েছি যে, সাম্যের সমাজ কাঠামো গড়ে উঠলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় না। অসাম্যের ঘুণ পোকার আক্রমণ থেকে মানুষের চেতনাকে বাঁচাতে, সাম্যের সমাজ কাঠামোকে বাঁচাতে সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিকল্পহীন।

 আমাদের সমিতি বিভিন্ন ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনে বার বার সামিল হয়েছে। আন্দোলন কখনও জ্যোতিষী বা ধর্মগুরুদের ভণ্ডামীর বিরুদ্ধে; কখনও বা ভারতীয় সংবিধানে দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যাকে পূর্ণ-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রীয় পদাধিকারীদের ‘বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন’-এ অংশগ্রহণ থেকে বিরত করতে; আবার কখনও বা ড্রাগ অ্যাণ্ড ম্যাজিক রেমেডিস (অবজেকশন্যাবল অ্যাডভারটাইজমেণ্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৪-কে আইনের বইয়ের পাতা থেকে তুলে এনে প্রয়োগ করতে। প্রতিটি ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনেই একের পর এক জয় আমরা এনেছি। কিন্তু কোনও জয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের সমিতির আন্দোলনের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি। এমনকি অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে চূড়ান্ত আঘাতে ভেঙে ফেলার পরও আমাদের এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রয়োজন হারিয়ে যাবে না। সাম্যের সমাজ কাঠামো গড়ে তোলার পরও নয়। কারণ যুক্তিবাদী আন্দোলন বা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অভাবে ক্ষমতার ঘুণপোকা, ৰীতির ঘুণ পোকা সাম্যের সমাজ কাঠামোকে কুরে কুরে ফোঁপরা করে দেবে।

 'নর্মদা বাঁচাও...'এর মত এইসব দাবি আদায়ের আন্দোলন সমাজ কাঠামো বা সিস্টেম পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত নয়, তাই এই জাতীয় আন্দোলন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থন যেমন অনেক সময়ই পেয়ে ঋকে, তেমনই প্রচার মাধাম্যগুলো নিজেদের প্রগতিশীল ইমেজ তৈরি করতে এদের প্রচার দেয়।


 যদিও কোনও বাণিজ্যিক পত্রিকা দিব্যি গেলে নিজেদের যুক্তিকামী ও সামাকামী দল ঘোষণা করেন, তাহলে তখনাৎ তা মন্ত্রী বা মাতালের ‘ভাট-বকা' বলে ধরে নিয়ে বাতিল করতে পারেন। কারণ, এটাই পরম সত্য যে-পত্রিকায় পুঁজি নিয়োগ করা কোটিপতি ব্যবসায়ী কখনই চাইবেন না, যুক্তির পথ ধরে সাম্যের সমাজ গড়ে হক, আর তিনি ধনকুবের থেকে সাধারণ মানুষের আর্থিক মানে নেমে আসুন। তাই এঁরা সঠিক সাম্যের আন্দোলনকে ঠেকাতে যড়যন্ত্রের সমস্ত রকম ফাঁদ পাতার শাসনতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত রাখেন ও প্রয়োগ করেন।

২১৩