পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পৃথিবীতে পাপ নেই? অথবা ‘মহাপ্লাবন’ আদৌ হয়নি? সবটাই গপ্পো'?

O


কারণ: সতেরো

মহাপ্রলয়ের জাহাজে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর একজোড়ার কি জায়গা হওয়া সম্ভব?

বাইবেলে বলা হয়েছে এবং মুসলিমরাও বিশ্বাস করেন, মহাপ্রলয়ের আগে একমাত্র পুণাবান মানুষ নোয়া'কে আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে ঈশ্বর সাবধান করে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিলেন একটা তিনতলা জাহাজ তৈরি করতে, যেটা হবে ৩০০ হাত লম্বা, ৫০ হাত চওড়া ও ৩০ হাত উঁচু।

 জাহাজ তৈরি হল। এরপর শুরু হল মহাপ্লাবন। চল্লিশ দিন, চল্লিশ রাত ধরে অঝোরে বৃষ্টি ঝরল। বৃষ্টির প্রাবল্যে পৃথিবীর সব পর্বতের চুড়োগুলো পর্যন্ত গেল ডুবে। ডুবে মরল পৃথিবীর প্রাণিকুল। বেঁচে রইল তারা, যারা আশ্রয় পেয়েছিল জাহাজে। সেই কৃপাধন্য কারা? একজোড়া করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী। হ্যাঁ, এত প্রলয়ের পরও তারা বেঁচে ছিল, কারণ জাহাজে শুধু জোড়ায় জোড়ান প্রাণীই ছিল না, ছিল তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত খাবার-দাবার।

 এতো গেল ধর্মীয় বিশ্বাস। এবার আসুন দেখা যাক, বিশ্বাসটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

 আবহবিদ্যার বই থেকে আমরা জানতে পারি, এক বর্গমিটার জমির উপর যে বায়ুমণ্ডল রয়েছে, তাতে গড়ে মোটামুটি ১৮ কিলোগ্রাম জল থাকে। তবে কোনও ভাবেই ২৫ কিলোগ্রামের বেশি নয়। বায়ুমণ্ডলের এই আদ্রতা ঘনীভূত হয়ে একসঙ্গে যদি ঝরে পড়ে, তাহলে পৃথিবীর জলের গভীরতা কতটা বাড়ে, আসুন আমরা এবার সেটাই দেখি।

 ১ বর্গমিটার জায়গায় সবচেয়ে বেশি জল থাকতে পারে ২৫ কিলোগ্রাম, অর্থাৎ ২৫০০০ ঘন সেণ্টিমিটার। অর্থাৎ কিনা, ২৫০০০ ঘন সেণ্টিমিটার জল ঝরবে ১ বর্গ মিটার বা ১০০x ১০০ = ১০,০০০ বর্গ সেণ্টিমিটার জমির উপর। অথাৎ মহাপ্লাবনে সবচেয়ে বেশি জল জমা হলে তা হতে পারে ২.৫ সেণ্টিমিটার গভীর। অর্থাৎ মহাপ্লাবনে পৃথিবীর সব জায়গায় গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হলে ২.৫ সেণ্টিমিটার জল জমতে পারে।

 বিশ্বাস করুন, মহাপ্লাবনে সত্যিই এর চেয়ে বেশি জল কোনও ভাবেই জমা সম্ভব নয়।

৪০