পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হয়ে, হয়ে উঠেছিল 'বিজ্ঞান' বা 'প্রেম'-এর প্রতীকের মতই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিস্ময়কর নিয়মশৃঙ্খলার প্রতীক। এর বাড়তি কিছু নয়।

O


কারণ: সাতাশ

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান শেষপর্যন্ত পরমচৈতন্যে গিয়ে পৌঁছেছে। পরমব্রহ্ম? শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা।

এ জাতীয় বক্তব্য কোনও হেলাফেলার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশিত হয়েছে এপার বাংলার সবচেয়ে নামী-দামী ঝাঁ চকচকে সাহিত্য পত্রিকা ‘দেশ-এর ২২ এপ্রিল, ১৯৯৫ সংখ্যায়। প্রবন্ধটির শিরোনাম: 'বিজ্ঞান ও ভগবান'। লেখক হৃষীকেশ সেন। শ্রীসেন জানিয়েছেন, বর্তমান বিজ্ঞান বিশ্ব-রহস্য সম্বন্ধে যেটুকু জানে, প্রাচীন আমলের বা পুরাকলের পিছিয়ে থাকা জ্ঞানভাণ্ডার নিয়ে মানুষ (এই পিছিয়ে থাকা জ্ঞানভাণ্ডারের কথা শ্রীসেনই স্বীকার করেছেন) বহু আগেই সেসব জেনে ফেলেছিল।

 শ্রীসেনের বক্তবোর স্ববিরোধিতাটুকু বড় বেশি নজর কাড়ার মত। তারপরও দেখা যাক, শ্রীসেনের ধারণা মত পিছিয়ে থাকা জ্ঞান ভাণ্ডার নিয়ে পুরাকালের মানুষ কী জেনেছিল?

 হিন্দু দর্শনে জীবের আত্মাকে জীবাত্মা ও বস্তুর আত্মাকে ভূতাত্মা বলে। অর্থাৎ বস্তুর চৈতন্য বা আত্মা যে আছে, এ ধারণায় প্রাচীন হিন্দু দর্শন পৌঁছেছিল। দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে আধুনিক বিজ্ঞানে বস্তুর চৈতন্যের ধারণা এলো। এবং আধুনিক পদার্থবিদ্যার রূপকাররা পদার্থবিদ্যার জটিল তত্ত্ব ও জটিলতর অঙ্ক নিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতে বস্তুজগৎ ছাড়িয়ে শেষপর্যন্ত অখণ্ড পরমচৈতনে গিয়ে পোঁছেছেন।

 শ্রীসেনের এই ধরনের বক্তব্য বহু পাঠক-পাঠিকাকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দুলিয়ে দিয়েছে। তারই ফলস্বরূপ এই প্রসঙ্গে আমার মতামত জানতে চেয়ে আমাদের যুক্তিবাদী সমিতির দপ্তরে চিঠিও এসেছে প্রচুর।

 শ্রীসেনের এই অতিসরলীকৃত ধারণা বা উদ্দেশ্যমূলক ধারণা প্রচারের পিছনে আদৌ কোনও বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক ভিত্তি আছে কি না, দেখা যাক।

 কোয়াণ্টাম বলবিদ্যার নানা ধারা আমাদের পরিচিত করিয়েছে পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষপথের ইলেকট্রনের গতিবিধির তাত্ত্বিক নিয়মের সঙ্গে, পরিচিত হয়েছি অন্যান্য বহু কণার সঙ্গে, তাদের নানা ধর্মের সঙ্গে। বস্তুর মৌলকণা অণু-পরমাণুর গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও অজস্র কণার সন্ধান আমরা পেয়েছি। জেনেছি, প্রোটন-নিউট্রন ছাড়াও গুচ্ছের বেরিয়ন-কণা, ইলেকট্রন ছাড়াও একগাদা

৫৮