পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—ধিঙ্গী মেয়েকে নিয়ে হয়েছে জ্বালা। কারো ঘাড়ে যে চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হবো তার উপায় নেই। মরণ! বসস্তবাবু তবু চেষ্টা করেন নিষেধ করতে স্ত্রীকে। তিনি জানেন। মেয়ের কোন গতি তিনি কিছু করতে পারেন নি। বলেন। —কি যা-তা বলছে আমুর মা ? অশোক জানায় সাবিত্রীকে। —আমাদের কাজকম্মো কর। দিনরাত তো বসে বসে অন্ন ধ্বংস করছিস। দিস। ইজ সোস্যাল ক্রাইম। সামাজিক অপরাধ এটা। সাবিত্রী মায়ের কথায় রেগেছিল। ওর কথা বলে। —তুই কি করছিস ? দিনরাত দলবাজী-চিৎকার আর সব কিছু গোলমাল পাকানোর ষড়যন্ত্র। এই নিয়ে বড়াই করিস। অশোক গর্জে ওঠে। —থামবি তুই! রিএ্যাকসেনারি কোথাকার ? বুঝলি তোদের এই মিডল ক্ল্যাশ নোংরা মনোভাবটাই এর জন্য দায়ী। কি আছে তোর যে হারাতে ভয় করিস? মান সম্মান কিছু আছে আর? --তাই বলে অন্ধের মত তোর মতটাকে অচল জেনেশুনেও মানতে হবে ? সাবিত্রী জবাব দিতেই অশোক ধমক দেয়। ওর মুখের উপর কথা বললেই চটে যায়। সে । — বুঝস তুই? একটা ছেলের কঁধে ভর করে হাঁড়িকুড়ি ঠেলা আর বৎসরান্তে একটি করে অভিশপ্ত শিশুকে এনে পৃথিবীর জঞ্জাল বাড়ানোই তোদের আদর্শ। মাও তাই পরম সত্য বলে জানে। সাবিত্রী ওর এই সব কথায় সাড়া দিল না। বৃথা তর্ক ভালো লাগে না তার। বাড়িতে তার জন্য এমনি ব্যঙ্গ আর আঘাতগুলোই স্তরে স্তরে জমা হয়ে আছে। অনেক চেষ্টা করেছে সাবিত্রী ভালোভাবে বঁাচার। কিন্তু বাড়ির মানুষগুলো তবু তাকে ক্ষমা করতে চায় না। ওরা ভাবে এই মন্দভাগ্যের জন্য সাবিত্রই দায়ী, তবু জানে না সে, চেষ্টা করছে নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্যেই। (8