পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 छांद्र°रु খানিকটা করিয়া কাটা-বন্ধ করিবার উপায় নাই-হু হু হিম আসে রাত্রে । এত নীচু যে হামাগুড়ি দিয়া ভিতরে ঢুকিতে হয়। মেঝেতে খুব পুরু করিয়া শুকনো কাশ ও বন-ঝাউয়ের সুটি বিছানো--তাহার উপর শতরঞ্জি, তাহার উপর তোষক-চাদর পাতিয়া ফরাস করা। আমার খুপড়িটি দৈর্ঘ্যে সাত হাত, প্রস্থে তিনি হাত । সোজা হইয়া দাড়ানো অসম্ভব ঘরের মধ্যে, কারণ উচ্চতায় भांबा डिन शोऊ । কিন্তু বেশ লাগে এই খুপারি। এত আরাম ও আনন্দ কলিকাতায় তিনচারতলা বাড়ীতে থাকিয়াও পাই নাই । তবে বোধ হয় আমি দীর্ঘদিন এখানে থাকিবার ফলে বন্য হইয়া যাইতেছিলাম, আমার রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাল-মন্দ লাগা সবেরই উপর এই মুক্ত অরণ্য-প্রকৃতির অল্প-বিস্তর প্রভাব আসিয়া পড়িয়াছিল, তাই এমন হইতেছে কিনা কে জানে ? খুপরিতে ঢুকিয়া প্রথমেই আমার ভাল লাগিল সদ্য কাটা কাশ-ডাঁটার তাজা সুগন্ধটা, যাহা দিয়া থুপরির বেড়া বাধা । তাহার পর ভাল লাগিল আমার মাথার কাছেই এক বৰ্গহাত পরিমিত ঘুলঘুলিপথে দৃশ্যমান, অৰ্দ্ধশায়িত অবস্থায় আমার দুটি চােখে দৃষ্টির প্রায় সমতলে অবস্থিত ধূ-ধূ বিস্তীর্ণ সর্ধেক্ষেতের হলদে ফুলরাশি। এ-দৃশ্যটা একেবারে অভিনব, আমি যেন একটা পৃথিবীজোড়া হলদে কার্পেটের উপরে শুইয়া আছি। হু-হু হাওয়ায় তীব্র বাজালো সর্ষেফুলের গন্ধ । শীতও যা পড়িতে হয় পড়িয়াছিল। পশ্চিমে হাওয়ার একদিনও কামাই ছিল না, আমন কড়া রৌদ্র যেন ঠাণ্ডা জল হইয়া যাইত কনকনে পশ্চিমা হাওয়ার প্রাবল্যে । বইহারের বিস্তৃত কুল-জঙ্গলের পাশ দিয়া ঘোড়া করিয়া ফিরিবার সময় দেখিতাম দুরে তিরাশী-চৌকার অনুচ্চ নীল পাহাড়শ্রেণীর ওপারে শীতের সূর্য্যাস্ত। সারা পশ্চিম আকাশ অগ্নিকোণ হইতে নৈঋত কোণ পর্য্যস্ত রাঙা হইয়া যায়, তরল আগুনের সমুদ্র, হু হু করিয়া প্রকাণ্ড অগ্নিগোলকের মত বড় সুর্য্যটা নামিয়া পড়ে-মনে হয় পৃথিবীর আহ্নিক গতি যেন প্রত্যক্ষ করিতেছি, বিশালভূপৃষ্ঠ যেন