পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১২
আরণ্যক

আসিতে দিবে না। অথচ আমার কাজ ফেলিয়া থাকিলে চলে না, বাধ্য হইয়া চলিয়া আসিলাম। আসিবার সময় ভানুমতী বলিল—বাবুজী, কলকাতা থেকে আমার জন্যে একখানা আয়না এনে দেবেন? আমার আয়না একখানা ছিল, অনেক দিন ভেঙে গিয়েছে।

 ষোল বছর বয়সের সুশ্রী নবযৌবনা কিশোরীর আয়নার অভাব! তবে আয়নার সৃষ্টি হইয়াছে কাদের জন্যে? এক সপ্তাহের মধ্যেই পুর্ণিয়া হইতে একখানা ভাল আয়না আনাইয়া তাহাকে পাঠাইয়া দিয়াছিলাম।

চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ

কয়েক মাস পরে। ফান মাসের প্রথম। বটুলিয়া হইতে কাছারি ফিরিতেছি, জঙ্গলের মধ্যে কুণ্ডীর ধারে বাংলা কথাবার্তায় ও হাসির শব্দে ঘোড়। ধামাইলাম। যত কাছে যাই, ততই আশ্চর্য্য হই। মেয়েদের গলাও শোনা ঘাইতেছে~ব্যাপার কি? জঙ্গলের মধ্যে ঘোড়া ঢুকাইয়া কুণ্ডীর ধারে লইয়া গিয়া দেখি বনঝাউয়ের ঝোপের ধারে সতরঞ্চি পাতিয়া আট-দশটি বাঙালী ভদ্রলোক বসিয়া গল্পগুজব করিতেছে, পাচ-ছয়টি মেয়ে কাছেই রান্না করিতেছে, ছ সাতটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছুটাছুটি করিয়া খেলা করিয়া বেড়াইতেছে। কোথা হইতে এগুলি মেয়ে-পুরুষ এই ঘোর জঙ্গলে ছেলেপুলে লইয়া পিকনিক করিতে আসিল বুঝিতে না পারিয়া অবাক হইয়া দাড়াইয়া আছি, এমন সময় সকলেরই চোখ আমার দিকে পড়িল—এক জন বাংলায় বলিল-এ ছাতুটা আবার কোথা থেকে এসে জুটল এ জঙ্গলে? আম্‌ব্রেলু?

 আমি ঘোড়া হইতে নামিয়া তাদের কাছে যাইতে যাইতে বলিলাম— আপনারা বাঙালী দেখচি—এখানে কোথা থেঞ্চে এলেন?

 তারা খুব আশ্চর্য্য হইল, অপ্রতিভও হইল। বলিল —ও, মশায় বাঙালী? হেঁ হেঁ, কিছু মনে করবেন না, আমরা ভেবেছি—হে-হে—