পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
আরণ্যক

বিস্ময়ে প্রথম রেশ কাটিয়া গেলে রাজু আমায় বলিল-পুৱযনারায়ণ পুর্ব্বে উদয়-পাহাড়ে ওঠেন না বা পশ্চিম-সমুদ্রে অন্ত ঘন না?

 বলিলাম—না।

 —কথা ইংরিজি বইতে লিখেছে?

 জ্ঞান মানুষকে সত্যই সাহসী করে, যে শান্ত, নিরীহ রাজু পাভের মুখে কখনও উচু সুরে কথা শুনি নাই—সে সতেজে, সদর্পে বলি—সুট বাত, বাবুঞ্জী। উদয়-পাহাড়ের যে গুহা থেকে সূর্যনারায়ণ মোজ ওঠেন সে গুহ। একবার মুঙ্গেরের এক সাধু দেখে এসেছিলেন। অনেক দূর হেঁটে যেতে হয়, পূর্ব্বদিকের একেবারে সীমানায় সে পাহাড়, গুহার মুখে মস্ত পাথরের দরজা, ওঁর অভ্রের রথ থাকে সেই গুহার মধ্যে। যে-সে কি দেখতে পায় হুজুর? বড় বড় সাধু মহাস্ত দেখেন। ঐ সাধু অভ্রের রথের একটা কুচি এনেছিলেন—এই এত বড় চকচকে অভ্র-আমার গুরুভাই কামতাপ্রসাদ স্বচক্ষে দেখেছেন।

 কথা শেষ করিয়া রাজু সগর্বে একবার সমবেত গাঙ্গোতাদের মুখের দিকে চক্ষু ঘুরাইয়া ফিরাইয়া চাহিল।

 উদয়-পর্ব্বতের গুহা হইতে সূর্যের উত্থানের এত বড় অকাট্য ও চাক্ষুষ এমাণ উত্থাপিত করার পরে আমি সেদিন একেবারে নিশুপ হইয়া গেলাম।

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

যুগলপ্রসাদকে এক দিন বলিলাম-চল, নতুন গাছপালার সন্ধান করে আসি মহালিখারূপের পাহাড়ে।

 যুগল সোৎসাহে বলিল—এক রকম লতানে গাছ আছে ওই পাহাড়ের জলে—আর কোথাও নেই। কীহড় ফল বলে এদেশে। চলুন খুলে দেখি।