গাঙ্গোতা। এ অঞ্চলে গাঙ্গোতা জাতির উপজীবিকা চাষবাস ও পশুপালন, তাহা আমি এতদিনে জানিয়াছিলাম-কিন্তু এ লোকটা এই জনহীন গভীর বনের মধ্যে একা কি করে?
বলিলাম-তুমি এখানে কি কর? তোমার বাড়ি কোথায়?
-হুজুর, মহিষ চরাই। আমার ঘর এখান থেকে দশ ক্রোশ উত্তরে ধরমপুর, লছমনিয়াটোলা।
- নিজের মহিষ? কতগুলো আছে?
লোকটা গর্বের সুরে বলিল- পাঁচটা মহিষ আছে হুজুর।
পাঁচটা মহিষ। দস্তুরমতো অবাক হইলাম। দশ ক্রোশ দূরের গ্রাম হইতে পাঁচটা মাত্র মহিষ সম্বল করিয়া লোকটি এই বিজন বনের মধ্যে মহিষচরির খাজনা দিয়া একা খুপরি বাঁধিয়া মহিষ চরায়-দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এই ছোট্ট খুপরিটাতে কি করিয়া সময় কাটায়-কলিকাতা হইতে নূতন আসিয়াছি, শহরের থিয়েটার-বায়োস্কোপে লালিত যুবক আমি- বুঝিতে পারিলাম না।
কিন্তু এদেশের অভিজ্ঞতা আরো বেশি হইলে বুঝিয়াছিলাম কেন গনু মাহাতো ওভাবে থাকে। তাহার অন্য কোনো কারণ নাই ইহা ছাড়া যে, গনু মাহাতোর জীবনের ধারণাই এইরূপ। যখন তাহার পাঁচটি মহিষ তখন তাহাদের চরাইতে হইবে, এবং যখন চরাইতে হইবে, তখন জঙ্গলে আছে, কুঁড়ে বাঁধিয়া একা থাকিতেই হইবে। এ অত্যন্ত সাধারণ কথা, ইহার মধ্যে আশ্চর্য হইবার কি আছে!
গনু কাঁচা শালপাতায় একটা লম্বা পিকা বা চুরুট তৈরি করিয়া আমার হাতে সসম্ভ্রমে দিয়া আমায় অভ্যর্থনা করিল। আগুনের আলোতে উহার মুখ দেখিলাম-বেশ চওড়া কপাল, উঁচু নাক, রং কালো- মুখশ্রী সরল, শান্ত চোখের দৃষ্টি। বয়স ষাটের উপর হইবে, মাথার চুল একটিও কালো নাই।