পাতা:আরণ্যক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুবার মাত্র ডাকঘরে লোক যাইত। মধ্য-এশিয়ার জনহীন, দুস্তর ও ভীষণ টাক্‌লামাকান মরুভূমির তাঁবুতে বসিয়া বিখ্যাত পর্যটক সোয়েন হেডিনও বোধ হয় এমনি আগ্রহে ডাকের প্রতীক্ষা করিতেন। আজ আট-নয় মাস এখানে আসিবার ফলে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই জনহীন বন-প্রান্তরে সূর্যাস্ত, নক্ষত্ররাজি, চাঁদের উদয়, জ্যোৎস্না ও বনের মধ্যে নীলগাইয়ের দৌড় দেখিতে দেখিতে যে বহির্জগতের সঙ্গে সকল যোগ হারাইয়া ফেলিয়াছি-ডাকের চিঠি কয়েকখানির মধ্য দিয়া আবার তাহার সহিত একটা সংযোগ স্থাপিত হইত।

 নির্দিষ্ট দিনে জওয়াহিরলাল সিং ডাক আনিতে গিয়াছে-আজ দুপুরে সে আসিবে। আমি ও বাঙালি মুহুরীবাবুটি ঘন ঘন জঙ্গলের দিকে চাহিতেছি। কাছারি হইতে মাইল দেড় দূরে একটা উঁচু ঢিবির উপর দিয়া পথ। ওখানে আসিলে জওয়াহিরলাল সিংকে বেশ স্পষ্ট দেখা যায়।

 বেলা দুপুর হইয়া গেল। জওয়াহিরলালের দেখা নেই। আমি ঘন ঘন ঘর-বাহির করিতেছি। এখানের আপিসের কাজের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। বিভিন্ন আমিনের রিপোর্ট দেখা, দৈনিক ক্যাশবই সই করা, সদরের চিঠিপত্রের উত্তর লেখা, পাটোয়ারী ও তহসিলদারের আদায়ের হিসাব-পরীক্ষা, নানাবিধ দরখাস্তের ডিগ্রি-ডিস্মিস্ করা, পূর্ণিয়া মুঙ্গের ভাগলপুর প্রভৃতি স্থানে নানা আদালতে নানাপ্রকার মামলা ঝুলিতেছে-ঐ সকল স্থানের উকিল ও মামলা-তদ্বিরকারকদের রিপোর্ট পাঠ ও তার উত্তর দেওয়া-আরো নানা প্রকার বড় ও খুচরা কাজ প্রতিদিন নিয়ম-মতো না করিলে দু-তিনদিনে এত জমিয়া যায় যে, তখন কাজ শেষ করিতে প্রাণান্ত হইয়া ওঠে। ডাক আসিবার সঙ্গে সঙ্গে আবার একরাশি কাজ আসিয়া পড়ে। শহরের নানা ধরনের চিঠি, নানা ধরনের আদেশ, অমুক জায়গায় যাও, অমুকের সঙ্গে অমুক মহালের বন্দোবস্ত কর, ইত্যাদি।

 বেলা তিনটার সময় জওয়াহিরলালের সাদা পাগড়ি রৌদ্রে চক্‌ চক্