উড়ানির আর এক মুড়ো খুলিয়া সে আরো কতকগুলি জরাজীর্ণ কাগজ বাহির করিয়া বলিল-এগুলো দেখুন দেখি হুজুর। ভাবি একবার জেলায় গিয়ে উকিলদের দেখাই, তা মামলা কখনো করি নি, করা পোষায় না। তাগাদা করি, দিচ্ছি দেব করে টাকা দেয় না অনেকে।
দেখিলাম, সবগুলিই তামাদি দলিল। সবসুদ্ধ জড়াইয়া সেও চার-পাঁচ হাজার টাকা। ভালোমানুষকে সবাই ঠকায়। বলিলাম-সাহুজী, মহাজনী করা তোমার কাজ নয়। এ-অঞ্চলে মহাজনী করতে পারবে রাসবিহারী সিং রাজপুতের মতো দুঁদে লোকরা, যাদের সাত-আটটা লাঠিয়াল আছে, খাতকের ক্ষেতে নিজে ঘোড়া করে গিয়ে লাঠিয়াল মোতায়েন করে আসে, ফসল ক্রোক করে টাকা আর সুদ আদায় করে। তোমার মতো ভালোমানুষ লোকের টাকা শোধ করবে না কেউ। দিও না কাউকে আর।
ধাওতালকে বুঝাইতে পারিলাম না, সে বলিল-সবাই ফাঁকি দেয় না হুজুর। এখনো চন্দ্র-সূর্য উঠছে, মাথার উপর দীন-দুনিয়ার মালিক এখনো আছেন। টাকা কি বসিয়ে রাখলে চলে, সুদে না বাড়লে আমাদের চলে না হুজুর। এই আমাদের ব্যবসা।
তাহার এ-যুক্তি আমি বুঝিতে পারিলাম না, সুদের লোভে আসল টাকা নষ্ট হইতে দেওয়া কেমনতর ব্যবসা জানি না। ধাওতাল সাহু আমার সামনেই অম্লান বদনে পনের-ষোল হাজার টাকার তামাদি দলিল ছিঁড়িয়া ফেলিল-এমনভাবে ছিঁড়িল যেন সেগুলো বাজে কাগজ-অবশ্য, বাজে কাগজের পর্যায়েই তাহারা আসিয়া দাঁড়াইয়াছে বটে। তাহার হাত কাঁপিল না, গলার সুর কাঁপিল না।
বলিল-রাঁইচি আর রেড়ির বীজ বিক্রি করে টাকা করেছিলাম হুজুর, নয়তো আমার পৈতৃক আমলের একটা ঘষা পয়সাও ছিল না। আমিই করেছি, আবার আমিই লোকসান দিচ্ছি। ব্যবসা করতে গেলে লাভ-লোকসান আছেই হুজুর।