পাতা:আর্য্যাবর্ত্ত (প্রথম বর্ষ).pdf/৭২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া পরিচারক পলায়নোন্মুখ হইল, স্তুপের বাহিরে আসিয়া । দেখিল যে, একজনমাত্র অশ্বারোহী স্তু পাভিমূখে আসিতেছে ও তাহার উকীষ, ভারতবাসীর ন্যায়। তখন সে আশ্বস্ত হইয়া প্রতীক্ষায় তোরণদ্বারে দণ্ডায়মান। হইল ; অশ্বারোহী নিকটে আসিলে পরিচারক তাহাকে চিনিতে পারিল, সে: নগররক্ষী জনৈক সৈনিক, তাহার সহিত নগরের পতন সম্বন্ধে অনেক কথা হইল । অবশেষে তাহার সাহায্যে রাজ্ঞীর দেহ বৃহৎ কাষ্ঠাধারে আবৃত করিয়া উভয়ে । কাষ্ঠাধার গর্ভগৃহের এক কোণে স্থাপিত করিয়া দক্ষিণাভিমুখে প্রস্থান করিল। গর্ভগৃহের দ্বার কিরৎকালের জন্য রূদ্ধ হইল। সৈনিক কহিয়াছিল, ঘুর্ণাবর্ভের । ন্যায় শকসৈন্য নগর প্রাচীরের উপর পতিত হইয়াছিল, অবলীলাক্রমে পরিখা ও : প্রাচীর উত্তীর্ণ হইয়া নগর মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল ও এক মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হইয়া গিয়াছিল। নগররক্ষীরা কেহই জীবিত নাই, একজন চলচ্ছক্তি বিহীন বৃদ্ধ ভিক্ষু দক্ষিণ নগর তোরণের আকাশকক্ষে লুক্কায়িত থাকিয়া সমস্ত ঘটনা দেখিয়াছেন । কয়েকজন নগরবাসী নগরধ্বংশের পর আসিয়া মৃতদেহের সৎকার করিয়া গিয়াছে। তাহারা সকলেই পাৰ্বত্য-ভূমিতে আশ্রয়গ্রহণ করিয়াছে। শকগণের অত্যাচারের আশঙ্কায় কেহই সমতল ভূমিতে আসিতে চাহে না । দিনের পর দিন যায়, আমাদিগের নিকটে আর মানবসমাগম হয় না। ক্রমে প্রদক্ষিণের পথ তৃণসঙ্কল হইয়া উঠিল, বেষ্টণীয় মধ্যে ও প্রান্তরে নির্ভয়ে মৃগযুথ বিচরণ করিতে আসিত, কিছুকাল পরে দৃষ্ট হইল, নগরে ও নগর-প্রাকারে মহাকায় বৃক্ষসকল জন্মিয়াছে, পাষাণ নির্ম্মিত প্রাচীর বেষ্টিত নগর দেখিলে বোধ হুইত যেন উহা কোন শ্রেষ্ঠির সুরক্ষিত উদ্যান। ক্রমে প্রান্তরেও বৃক্ষ জন্মিতে লাগিল। কিয়ৎকালপরে নগর আর নয়নগোচর হইত না । আমার পার্থে একটি লতা জন্মিয়াছিল, দারুণ নিদাঘ উত্তাপেও আমার ছায়া পাইয়া সে জীবিত ছিল, সে অনেক কথা কহিত ; কিন্তু তাহার ক্ষীণস্বর আমার কর্ণ পর্যন্ত আসিত না । সেই জন্যই বোধ হয়। সে বেষ্টনীর স্তম্ভ অবলম্বন করিয়া আমার নিকটে উঠিয়া আসিল । সে আসিয়া আমার পরুষ দেহ বেষ্টিত করিয়া । রহিল। সে যতদিন ছিল ততদিন তাহাকে অতীতের কথা বলিতাম, সে শুনিয়া ? বিস্মিতা হইত। তাহার জীবনে সে কখন মনুষ্য দেখে নাই, সুতরাং খেত, কৃষ্ণ, ও মিশ্রবর্ণের কথা শুনিয়া সে বড়ই বিস্মিত হইত। একটি ক্ষুদ্র অশ্বখবৃক্ষ স্তুপশীর্ষস্থ । ছত্রের উপরে জন্মগ্রহণ করিয়াছিল। ক্রমে সেই ক্ষুদ্র বৃক্ষ মহাকায় । মহীরূহে পরিণত হইল। তাহার ভারে এক বর্ষ রজনীতে সশব্দে সপ্তছত্র সমন্বিত ।