পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৯৫ ]

বরদাবাবু তাঁহার নিকট বসিয়া নানা প্রকার শাস্ত্রীয় আলাপ করিতে লাগিলেন। ইত্যবসরে চিন্তাযুক্ত এক ব্যক্তি অধোবদনে নিকটে আসিয়া বসিলেন। বরদা বাবু তাঁহাকে নিরীক্ষণ করত বলিলেন —রাম! দেখ কি?—নিকটে যে তোমার দাদা! রামলাল এই কথা শুনিবামাত্রে লোমাঞ্চিত হইয়া মতিলালের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, মতিলাল রামলালকে অবলোকনপূর্ব্বক চমকিয়া উঠিয়া আলিঙ্গন করিলেন। ক্ষণেক কাল নিস্তব্ধ থাকিয়া —“ভাই হে! আমাকে কি ক্ষমা করিবে”—মতিলাল এই কথা বলিয়া অনুজের গলায় হাত জড়াইয়া স্কন্ধদেশ নয়নবারিতে অভিষিক্ত করিলেন। দুইজনেই কিয়াৎক্ষণ মৌন ভাবে থাকিলেন —মুখ হইতে কথা নিঃসরণ হয় না —ভাই যে কি পদার্থ তাহা উভয়েরই ঐ সময়ে বিলক্ষণ বোধ হইল। পরে বরদা বাবুর চরণধূলা লইয়া মতিলাল জোড় হাতে বলিলেন —মহাশয়! আপনি যে কি বস্তু তাহা আমি এত দিনের পর জানিলাম —এ নরাধমকে ক্ষমা করুন। বরদাবাবু দুই ভ্রাতার হাত ধরিয়া উক্ত প্রাচীন ব্যক্তির নিকট হইতে বিদায় লইয়া পথিমধ্যে তাহাদিগের পরস্পরের যাবতীয় পূর্ব্ব কথা শুনিতে২ ও বলিতে২ চলিলেন এবং আলাপ দ্বারা মতিলালের চিত্তের বিভিন্নতা দেখিয়া অসীম আহ্লাদ প্রকাশ করিলেন। পরিবারেরা যে স্থানে ছিলেন, তথায় আসিলে মতিলাল কিঞ্চিৎ দূর থেকে উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন —“কই মা কোথায়? —মা! তোমার সেই কুসন্তান আবার এল —সে আজো বেঁচে আছে —মরে নাই —আমি যে ব্যবহার করিয়াছি তার পর যে তোমার নিকট মুখ দেখাই এমন ইচ্ছা করে না —এক্ষণে আমার বাসনা এই যে একবার তোমার চরণ দর্শন করিয়া প্রাণ ত্যাগ করি।” মাতা এই কথা শুনিবা মাত্রে প্রফুল্লচিত্তে অশ্রুযুক্ত নয়নে নিকটে