—কাহারো মট্কার উপর উঠিয়া লাফায়—কাহারো জলের কলসী ভাঙ্গিয়া দেয়।
বালীর সকল লোকেই ত্যক্ত হইয়া বলাবলি করিতে লাগিল—এ ছোঁড়া কে রে? যেমন ঘরপোড়া দ্বারা লঙ্কা ছারখার হইয়াছিল আমাদিগের গ্রামটা সেইরূপ তচ্নচ্ হবে না কি? কেহ২ ঐ বালকের পিতার নাম শুনিয়া বলিল—আহা বাবুরাম বাবুর এপুত্র—না হবে কেন? “পুত্রে যশসি তোয়ে চ নরাণাং পুণ্য লক্ষণম্।”
সন্ধ্যা হইল—শৃগালদিগের হোয়া২ ও ঝিঁ২ পোকার ঝিঁ২ শব্দে গ্রাম শব্দায়মান হইতে লাগিল। বলীতে অনেক ভদ্র লোকের বসতি—প্রায় অনেকের বাটীতে শালগ্রাম আছেন এজন্য শঙ্খ-ঘণ্টা ধ্বনির ন্যূনতা ছিল না। বেণী বাবু অধ্যয়নান্তর গামোড়া দিয়া তামাক খাইতেছেন ইত্যবসরে একটা গোল উপস্থিত হইল। পাঁচ-সাত জন লোক নিকটে আসিয়া বলিল—মশাইগো! বৈদ্যবাটীর জমিদারের ছেলে আমাদের উপর ইঁট মারিয়াছে—কেহ বলিল—আমার ঝাঁকা ফেলিয়া দিয়াছে—কেহ বলিল আমাকে ঠেলে ফেলেদিয়াছে—কেহ বলিল আমার মুখে থুতু দিয়াছে—কেহ বলিল আমার ঘিয়ের হাঁড়ি ভাঙ্গিয়াছে। বেণী বাবু পরদুঃখে কাতর—সকলকে তুষেতেষে ও কিছু কিছু দিয়া বিদায় করিয়া দিলেন পরে ভাবিলেন এ ছেলের তো বিদ্যা নগদ হইবে—এক বেলাতেই গ্রাম কাঁপিয়া দিয়াছে—এক্ষণে এখান হইতে প্রস্থান করিলে আমার হাড় জুড়ায়।
গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ খুড়া, ভগবতী ঠাকুরদাদা ও ফচ্কে রাজকৃষ্ণ আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন বেণী বাবু এ ছেলেটি কে? —আমরা আহার করিয়া নিদ্রা যাইতেছিলাম—গোলের দাপটে উঠে পড়েছিলাম—কাঁচা ঘুম ভাঙ্গাতে শরীরটা মাটি২ করিতেছে। বেণী বাবু কহিলেন—আর ও কথা কেনে বল?