পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ২২ ]

উঠিলে আমার বেগুন ক্ষেত হইবে! স্কুলের তদারকের কথা লইয়া খুঁটিনাটি করিলে আমার কি পরকালে সাক্ষী দিবে?

 শারদীয় পূজার সময় উপস্থিত—বাজারে ও স্থানে স্থানে অতিশয় গোল—ঐ গোলে মতিলালের গোলে হরিবোল বাড়িতে লাগিল। স্কুলে থাকিতে গেলে ছটফটানি ধরে—একবার এ দিগে দেখে—একবার ও দিগে দেখে—একবার বসে—একবার ডেক্স বাজায়,—এক লহমাও স্থির থাকে না। শনিবারে স্কুলে আসিয়া বক্রেশ্বর বাবুকে বলিয়া কহিয়া হাপ্‌স্কুল করিয়া বাটী যায়। পথে পানের খিলি খরিদ করিয়া, দুই পাশে পায়রাওয়ালা ও ঘুড়িওয়ালা দোকান দেখিয়া যাইতেছে—অম্লান মুখ, কাহারও প্রতি দৃক্‌পাত নাই, ইতিমধ্যে পুলিশের একজন সারজন ও কয়েকজন পেয়াদা দৌড়িয়া আসিয়া তাহার হাত ধরিল। সারজন কহিল তোমারা নাম পর পুলিশমে গেরেফ্‌তারি হুয়া—তোমকো জরুর জানে হোগা। মতিলাল হাত বাগড়া বাগড়ি করিতে আরম্ভ করিল। সারজন বলবান—জোরে হিড়২ করিয়া টানিয়া লইয়া যাইতে লাগিল। মতিলাল ভূমিতে পড়িয়া গেল—সমস্ত শরীরে ছড় গিয়া ধুলায় পরিপূর্ণ হইল, তবুও একবার ছিনিয়া পলাইতে চেষ্টা করিতে লাগিল, সারজনও মধ্যে মধ্যে দুই এক কিল ও ঘুষা মারিতে লাগিল। অবশেষে রাস্তায় পড়িয়া বাপকে স্মরণ করিয়া কাঁদিতে লাগিল, এক এক বার তাহার মনে উদয় হইল যে কেন এমন কর্ম্ম করিয়াছিলাম—কুলোকের সঙ্গী হইয়া আমার সর্ব্বনাশ হইল। রাস্তায় অনেক লোক জমিয়া গেল—এ ওকে জিজ্ঞাসা করে—ব্যাপারটা কি? দুই একজন বুড়ী বলাবলি করিতে লাগিল, আহা কার বাছাকে এমন করিয়া মারে গা।—ছেলেটির মুখ যেন চাঁদের মত—ওর কথা শুনে আমাদের প্রাণ কেঁদে উঠে।