পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১১৭

পাঠ করিতেছে। শৈল-মণ্ডপের সঁড়িপথ-গুলিতে, ব্রাহ্মণদিগের আনুষঙ্গিক পূজা-সামগ্রী সকল সংরক্ষিত মহাপুরুষ, রথ, ঘোড়া, হাতী, (প্রকৃত অপেক্ষা বড়) অদ্ভুত কল্পনা-প্রসূত কত খুটিনাটি জিনিস, জমাটকাগজের উপর—রঙ্গিন কাগজের উপর আঁকা—দেবালয়ের গায়ে, ভঙ্গুর বংশদণ্ডের উপর লটকানো রহিয়াছে। এখানকার জীবকুল উন্মত্তভাবে বংশবর্ধনে ব্যাপৃত। ছোট-ছোট পাখী-চাতক কিংবা চড়াই-মন্দিরের সুড়ি-পথগুলিতে নীড়নিৰ্মাণ করিয়া, চিত্রবিচিত্র রঙ্গের অণ্ডে তাহা পূর্ণ করিতেছে। এই সঁড়ি-পথগুলিতে লোকজন যাতায়াত করিতেছে, পক্ষিশাবকগুলিচিচি শব্দ করিতেছে, এবং এই লঘু প্রাণীদিগের পরিত্যক্ত পুরীষ, কুট্টিম-প্রস্তরের উপর শিলাবৃষ্টির ন্যায় পতিত হইতেছে;—এই সমস্ত জীবন-উদ্যমের বিকাশে, বিচিত্র বিকটাকার জীবের প্রাচীর-বিলম্বিত চিত্রগুলিও যেন একটু সজীব হইয়া উঠিয়াছে।

 এখনও আরও উর্দ্ধে উঠিতে হইবে। এই অর্ধ-অন্ধকারের মধ্যে, এই সকল অখণ্ড-প্রস্তরময় মসৃণ প্রাচীরের মধ্যে, মনে হয়, যেন কোন ভূগর্ভস্থসমাধি-মন্দিরের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছি। এই সময়ে, হঠাৎ একটি বাতায়নের মধ্য দিয়া সূর্যের কিরণচ্ছটা প্রবেশ করিয়া আমার সর্ব্বাঙ্গ প্লাবিত করিল, তখন নিম্নদেশের দূরস্থ বৃক্ষ ও মন্দিরাদি দেখিতে পাইলাম। আমি আকাশের খুব উচ্চদেশে উঠিয়াছি। কতকগুলি শৈলপ-শৈলযুগের প্রস্তরবৎ প্রকাণ্ড, পরস্পর উপর্যপরি বিন্যস্ত, বিশ্লিষ্ট ও এক-ঝোকা, শুধু স্বকীয় পরমাণুরাশির ভারেই, প্রায় অনাদি কাল হইতে এক স্থানে দণ্ডায়মান।

 আবার একটি দেবালয়; কিন্তু উহাতে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমি উহা দ্বারদেশ হইতেই দেখিলাম। এইমাত্র আমি যে স্থানটি ছাড়িয়া আসিলাম, সেখানকার শৈলপগুলির ন্যায় এই শৈলস্তুপগুলিও পরস্পর উপর্যপরি বিন্যস্ত, কিন্তু তদপেক্ষা আরও প্রকাণ্ড ও চমৎকারজনক।