পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ফোঁটা নৈশ গগন-তটে মালাকারে ক্রমশঃ বিস্তৃত হইল। ওদিকে অস্তাচলদিগন্তে একটি স্কুল লোহিত গোলক অবসাদে ম্রিয়মাণ—একটি পুরাতন গ্রহ শ্রান্তক্লান্ত—একটি প্রাচীন জীবলোক পৃথিবীর অতিসান্নিধ্যবশতঃ ভয়ে আকুল;—ইনি অস্তমান চন্দ্রমা। এক্ষণে মন্দিরের সমস্ত কাকগুলা জাগ্রত হইয়া কা-কা রব করিতেছে। নিম্নদেশ হইতে, আকাশের সৰ্বদিক হইতে, যেখান দিয়াই উহারা চলিয়া যাইতেছে—ঐ কা-কা-ধ্বনি সমুখিত হইতেছে। •••••••

 প্রভাত হইয়াছে, সূর্যোদয়ের আর বড় বিলম্ব নাই। রথের চারিটা প্রকাণ্ড চাকা। টানিবার রসিগুলা ভূতলে বিছাইয়া রাখা হইয়াছে।

 এইবার, পুরোহিত ব্রাহ্মণের যে মন্দিরাকৃতি ক্ষুদ্র গৃহে পূজা-অর্চনা করিয়া রাত্রিযান করিয়াছিল, সেখান হইতে তাহারা নামিয়া আসিল। তাহাদের সম্মুখে, অষ্টাদশবর্ষীয় এক দল বালক, ত্রিশিখা-বিশিষ্ট মশাল ধরিয়া আছে; এবং বাহিরে আসিয়া, উদীয়মান দিবালোক যেমন-যেমন বৰ্ধিত হইতেছে, অমনই উহারা এক একটা করিয়া মশাল নিভাইয়া দিতেছে। এই বৃদ্ধ পুরোহিতেরা, এক এক জন করিয়া ক্রমান্বয়ে সেই দূরস্থ কৃষ্ণবর্ণ সোপানের উচ্চতম ধাপে আসিয়া দণ্ডায়মান হইল; এবং ধাপ হইতে ধাপান্তরে ক্রমশঃ যেমন নামিতে লাগিল, ঐ গুহ্যধর্ম্মের সেবক শুভ্রকেশ মুর্ত্তিগুলি প্রভাতের তরুণ আলোকে আরও পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। যাহাতে স্বকীয় ইষ্টদেবের বিশূল-চিটি আরও বিস্তৃতভাবে অঙ্কিত হইতে পারে, এই জন্য উহাদের ললাটের উপরিভাগ হইতে মস্তকের চূড়াদেশ পর্য্যন্ত মুণ্ডিত। পার্থিব বিষয় সম্বন্ধে এমনই উদাসীন যে, উহারা প্রায় উলঙ্গ—একখণ্ড বস্ত্রমাত্র উহাদের গায়ে জড়ানো রহিয়াছে। বর্ণভেদের চিম্নস্বরূপ, শোণের শুভ সূক্ষ্ম সূত্রগুচ্ছ জটা পাকাইয়া তির্যকভাবে বক্ষের উপর লম্বমান। মন্দিরাকৃতি সেই শোভাগৃহের জালা ও রথ—এই উভয়ের মধ্যে রেশমী বস্ত্রে আচ্ছাদিত একটি পদ-সেতু-—যাহার উপর