পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

এই প্রাচ্য সমাধিক্ষেত্রেও সেই “সাইপ্রেস"-ঝাউগাছগুলি দেখিতে পাওয়া যায়;—কেবল ভারতের প্রখর সূর্য্যোত্তাপে একটু ম্লানপ্রভ হইয়াছে, এইমাত্র। ফ্রাসের “সেকেলে” উদ্যানের ন্যায়, অত্রত্য উদ্যানেও, সরু-সরু বালির পথগুলি সোজা চলিয়াছে; উহার ধারে-ধারে আলবালভূমিতে সারি-সারি গোলাপগাছ। কতকগুলি রমণী ও কতকগুলি বালিকা এই কৃত্রিম মরু-উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত। উহারা প্রাতঃসন্ধ্যা দুই বেলা মাটির কলসীতে কোন কূপবিশেষের দুর্লভ জল আনিয়া এই সব গাছের তলায় ঢালিয়া দেয়; এবং এই সব অতলস্পর্শ গভীর কূপ হইতে পুরুষেরা অতি কষ্টে উহাদের জন্য জল উত্তোলন করে।

 দুর হইতে মনে হয়, যেন এই সব সুধালিপ্ত গম্বুজগুলি জীবন-উদ্যমে পূর্ণ। কিন্তু এই সব বিশাল মসজিদের অভ্যন্তরে একটিও চিত্র নাই, একটিও অলঙ্কার নাই। পূর্ব্বেকার সমস্ত বিলাসসামগ্রী এক্ষণে পসর জরাজীর্ণতার মধ্যে বিলীন হইয়া গিয়াছে।

 তথাপি, এই সব শূন্যগর্ভ গম্বুজের নীচে, সমাধিস্থানের প্রত্যেক প্রস্তর-বেদিকার উপর, এখনও পুষ্পমাল্যাদি দেখিতে পাওয়া যায়। তিনশত বৎসর হইতে যে রাজবংশ বিলুপ্ত হইয়াছে, সেই রাজবংশীয় রাজাদিগের গতি শ্লাঘ্য ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ এই পূজাপুস্পাঞ্জলি।

 তাপদগ্ধ মরুভূমির মধ্যে শুধু জলসেকের বলে এই যে উদ্যানগুলি সংরক্ষিত-ইহাদের কি-একটা অপূর্ব্ব মোহিনী শক্তি আছে; ইহাদের দেখিলে, স্বদেশে ফিরিবার জন্য কেমন-একটা ব্যাকুলতা উপস্থিত হয়। এই সব উদ্যানে সাইপ্রেস্‌-ঝাউ প্রতিবেশী তালীবনের সহিত একত্র বাস করিতেছে; এবং গোলাপ-আলবালের চারিপারে, আমাদের দেশে প্রজাপতিরা যেরূপ পুষ্প হইতে পুষ্পস্তরে উড়িয়া বসে, এখানে সেইরূপ মনিয়া-চড়াই ফুলের উপর উড়িয়া-উড়িয়া বসিতেছে।