পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদয়পুরমন্দিরের ব্রাহ্মণ।
২২৫

জাগিয়া উঠিল। সেই প্রাচীরের ধারে-ধারে,—বৃক্ষপত্রের পতন, সেই প্রাঙ্গণের তৃণগুল্ম, সেই প্রস্ফুটিত কুসুমরাশি আমার মনে পড়িয়া গেল। তখন আমার চক্ষে আমাদের সেই গৃহপ্রাঙ্গণই আমার সমস্ত জগৎ ছিল। অসীম অতীতে ফিরিয়া গিয়া, ক্ষণেকের জন্য আমার মন হইতে এই ব্রাহ্মণ্যের দেশ মুছিয়া গেল; উদয়পুরের সহর, উদয়পুরের দেববৃন্দ, উদয়পুরের সূর্য্য, উদয়পুরের দুর্ভিক্ষও মুছিয়া গেল।

 যাহাই হউক, দিবাবসানে শ্রীজগন্নাথ-রাজির উৎসবস্থলে আমি ঠিক আসিয়া উপস্থিত হইলাম।

 জগন্নাথরায়জির মন্দিরটি সদ্যপতিত তুষারবৎ শুভ্র। ৩০/৪০ ধাপের একটা উঁচু সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে হয়। কতকগুলা পাথরের হাতী প্রহরিরূপে সোপান রক্ষা করিতেছে।

 এই উত্তরভারতের মন্দিরচূড়াগুলিতে দাক্ষিণাত্যের ন্যায় দেবমূর্তি ও পশুমূর্তির অসঙ্গত মিশ্রণ দেখা যায় না; এই চূড়াগুলি বেশ প্রকৃতিস্থ ও শান্তধরণের; দূর হইতে মনে হয়, যেন সমাধিস্থানের ‘"ইউ” (ঝাউ) বৃক্ষ। শ্রীজগন্নাথজির মন্দিরের এইরূপ অনেকগুলি চূড়া আছে;—সমস্তই শুভ্রসদ্যপতিততুষারবৎ শুভ্র।

 আমি জানিতাম হিন্দু ভিন্ন,—উচ্চবর্ণের লোক ভিন্ন—এই মন্দিরের মধ্যে কেহ প্রবেশ করিতে পায় না। তাই আমি মন্দিরের প্রাঙ্গণে থাকিয়া আমার বন্ধুদ্বয়কে ডাকিয়া পাঠাইলাম।

 তাহারা আসিল। কিন্তু আমার পান্থশালায় তাদের যেমনটি দেখিয়াছিলাম, এখন আর তারা সেরূপ নাই আমাদের মধ্যে যেন আরও অতলস্পর্শ ব্যবধান পড়িয়া গিয়াছে। প্রথমেই উহারা অন্যদিনের মত আজ আমার হস্তস্পর্শ করিতে পারিবে না বলিয়া ক্ষমাপ্রার্থনা করিল, কারণ আজ তাহাদের পৌরোহিত্যকাজ করিতে হইবে, পবিত্র সামগ্রীসকল স্পর্শ করিতে হইবে।