পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে
২৪৯

পৌঁছিবার পূর্ব্বেই, দূরত্বের নিদর্শন-খোঁটার মত, উহাদের মৃতশরীরে সমস্ত পথ পরিচিহ্নিত হইতেছে।

 একজন বলয়বিক্রেতা দোকানদার গরম গরম কচুরী খাইতেছিল; তাহারি সম্মুখে, একজন রমণী—রমণীর কঙ্কাল বলিলেও হয়—যাচ্ঞার ভাবে সেইখানে আসিয়া দাঁড়াইল। তাহার শুষ্ক স্তনের উপর, তাহার বুকের হাড়ের উপর, সে একটি কঙ্কালসার শিশুকে জাপ্‌টাইয়া ধরিয়া আছে। না, দোকানদার তাহাকে কিছুই দিল না; এমন কি, তাহার দিকে একবার চাহিয়াও দেখিল না। সেই মৃতকল্প শিশুর শুষ্কস্তনা জননী একেবারে যেন পাগলের মত হইল। সে দাঁত বাহির করিয়া নেক্‌ড়ে বাঘের মত দীর্ঘস্বরে একটা চীৎকার করিয়া উঠিল। রমণী যুবতী,—বোধ হয় এক সময়ে দেখিতেও সুশ্রী ছিল। তাহার দুর্ভিক্ষক্লিষ্ট কপোলদেশে এখনো যৌবনের চিহ্ন দেদীপ্যমান। বোধ হয় ১৬বৎসর বয়স; প্রায় বালিকা বলিলেই হয়।…অবশেষে সে বুঝিতে পারিল, কেহই তাহার প্রতি দয়া করিবে না; সে পরিত্যাক্তা অনাথা। কোন বন্যপশু শক্রকর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া পলাইবার পথ না দেখিয়া নিরুপায় হইয়া যেরূপ চীৎকার করিতে থাকে সেইরূস সে চীৎকার করিতে লাগিল। তাহার নিকট দিয়া প্রকাণ্ডকায় হস্তিগণ নিঃশব্দে ধীরপদক্ষেপে চলিয়া যাইতেছে। তাহাদের আহারের জন্য, বহুদূর হইতে, মহার্ঘ মূল্যে ডালপালা সংগ্রহ করিয়া আনা হইয়াছে।

 কাকদিগের কলরব এই সমস্ত জনকোলাহল ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। হাজার-হাজার কাক গৃহছাদের উপর বসিয়া কা-কা ধ্বনি করিতেছে। কাকদিগের এই চিরকেলে কলরব ভারতবর্ষে আর সমস্ত শব্দকে ছাড়াইয়া উঠে। আজকাল তাহাদের ডাকের আরো বৃদ্ধি হইয়াছে—এখন উহা উল্লাসের সীমায় পৌঁছিয়াছে। যে সময়ে শবের পূতিগন্ধে চারিদিক্‌ আচ্ছন্ন হইয়া যায়, সেই দুর্ভিক্ষের সময়ই ইহাদের সু-কাল—প্রাচুর্যের কাল।