পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।
২৭৩

সাজানো বিলাসদ্রব্যের মধ্যে থাকিয়াও, যখন সেই সব বিগতবসন্ত উপবনগুলির বিষন্নতা মনে করি,—দুর্ভিক্ষের কথা মনে করি, তখন যে ভারত দুকূলবস্ত্রাবৃত দেয়ালের বাহিরে অবস্থিত, সেই ভারত আবার আমার মনে পড়িয়া যায়। সর্দ্দার-শ্রেণীর যে যুবকটি আমাকে এই প্রাসাদে আনিয়াছিলেন এবং যিনি মধুর-সৌজন্য-সহকারে আমাকে সমস্ত দেখাইতেছিলেন, তিনি যেন পরীরাজ্যের লোক। তাঁহার শুভ্র পরিচ্ছদ; মাথায় গোলাপী রেশমের টুপি; কানে মুক্তা; এবং গলায় দুই নহরের পান্নার কণ্ঠি। ভারতীয় ও পারস্যদেশীয় পুরাতন ক্ষুদ্রায়াতন চিত্রপটে যেরূপ চেহারা সচরাচর দেখা যায়, তাঁহার মুখশ্রী সেইরূপ অপূর্ব্বসুন্দর। এম্নিই ত তাঁহার দীর্ঘায়াত চক্ষু, তাহাতে আবার কজ্জলরেখায় আরো দীর্ঘীকৃত হইয়াছে। নাক খুব সরু; রেশমনিন্দী কালো গোঁপ; গালের রক্ত সিন্দুরের মত লাল;—স্বচ্ছ তৃণমণিসদৃশ ত্বকের উপর যেন একটা গোলাপী রঙের ছোপ্‌ দেওয়া।

 নগরের অপর পার্শ্বে গোয়ালিয়ারের প্রচীন রাজাদিগের সমাধিমন্দির; এই অঞ্চলটি একেবারে নিস্তব্ধ। উদ্যানের মধ্যে এই সকল বেলে-পাথরের কিংবা মার্ব্বেলের মন্দিরগুলি অবস্থিত, উহার চূড়াগুলা প্রকাণ্ড ‘সাইপ্রেস’তরুর মত ঊদ্ধদিকে ক্রমসূক্ষ্ম।

 এখানে যতগুলি গগনস্পর্শী সমাধিমন্দির আছে, তন্মধ্যে যেটিতে ভূতপূর্ব্ব মহারাজ কিয়ৎ-বৎসর হইতে চিরনিদ্রায় নিমগ্ন, সেই মন্দিরটি সর্ব্বাপেক্ষা জম্‌কালো। তাহাতে বেলে ও মার্ব্বেল পাথরের চমৎকার কাজ। এবং খুব পশ্চাদ্ভাগে যে স্থানটি সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র—সেইখানে একটা কালো মার্ব্বেলের বৃষ বসিয়া আছে। ইহা ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের একটি পরমারাধ্য সাঙ্কেতিক চিহ্ন। এই রাজকীয় সমাধিমন্দিরটির নির্ম্মাণকার্য্য শেষ না হইতে হইতেই, ইহারি মধ্যে পক্ষীরা ইহাকে আক্রমণ করিয়াছে। পেচক, ঘুঘু, টিয়াপাখী ঝাঁকে-ঝাঁকে আসিয়া মন্দিরের চূড়ায় বাসা